• ডেস্ক নিউজ:অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে একটি অধ্যা দেশের খসড়ায় নীতি গত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা তে সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট না করে বলা হয়েছে, ত্রয়ো দশ সংসদ প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না করার পর্যন্ত তারা ক্ষম তায় থাকবে।
  • এই সরকারের কোনো কার্যক্র মের বৈধতা সম্পর্কে বাং লাদেশের সুপ্রিম কোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন বা তা অবৈধ বা বাতিল করতে পারবে না, এমন কথাও বলা হয়েছে এতে।
  • বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে কোনো আদা লতে প্রশ্ন উত্থাপ ন বা মামলাও করা যাবে না। নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ, জ রুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধান উপদে ষ্টার পরামর্শ নেওয়া সহ সার্বিক বিষয়কে আইনি ভিত্তি নিয়ে এই অধ্যা দে শের খসড়া করা হয়েছে। খসড়ার শি রোনাম করা হয়েছে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০ ২৪’। 
  • গত ১৯ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই খস ড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। সেটি এখন গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
  • গতকাল শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেন ‘স্বাভাবিক ভাবেই পরবর্তী নির্বাচিত সরকার ক্ষম তা গ্রহণের আগ পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্ব র্তী সরকারের মেয়া দ কার্যকর থাক বে। অধ্যাদেশটি যখন জারি হবে তখনই আপনারা জানতে পারবেন।
  • তিনি বলেন, নানা ধরনের দিক, যা যা রয়েছে তা চিন্তা ভাবনা করে তো অধ্যাদে শের খসড়া প্রস্তুত করা হয়ে ছে। আইন উপদেষ্টা মহোদয় এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। উপদেষ্টা দেশে এলে কথা বলে নেবেন।
  • সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধি তা করে শিক্ষার্থীদে র আন্দোলন সরকার পতনের ছাত্র–জনতার তুমুল আ ন্দোলনে রূপ নিলে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান প্রধানম ন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিন দিন পর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তার আগেই ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ।
  • এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
  • সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, এর মধ্যে আছে সাংবিধানিক সংস্কারও।
  • সংবিধানে বলা আছে, সংসদ ভেঙে দিলে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে, আর কোনো দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে পরের ৯০ দিনেই হতে হবে নির্বাচন।
  • তবে সরকার শুরু থেকেই তার মেয়া দ এবং নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না।
  • সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ–জামান ১৮ মাসে র মধ্যে নির্বাচনের আভাস দিয়ে একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও সরকারের তরফে সেটি ‘ব্যক্তিগ ত বক্তব্য’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
  • আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ২০২৫ সালের শেষে ভোট হতে পারে বলে একটি বক্তব্য দেওয়ার পরে সেটি ‘সরকারের বক্তব্য নয়’ বলে প্রতিক্রিয়া জানান ধর্ম উপ দেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
  • দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অবশ্য এরই মধ্যে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলছে, তারা বলছে, সংবিধান সংশোধন বা সংস্কা রের বিষয়ে সিদ্ধা ন্ত নেবে নির্বাচিত সংসদ, সেটিই হবে টেকসই।
  • আরেক আলোচিত দল জামায়াতে ইসলামী শুরুতে ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ এমন একটি অবস্থান নিলে ও এখন ‘দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন’ দেওয়ার কথা বলছে।
  • ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের জনসম র্থন যাই থাকুক না কেন, তাদেরকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দি য়ে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কথা মাথায় না রেখেই সব কিছু করছে। এমনকি নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমি শনে র প্রধান বদিউল আলম মজুম দার বলেছেন, আও য়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন করলে সেটি অগ্রহণ যোগ্য হবে না।
  • সব কাজ ‘বৈধ’, আদালতে যাওয়ার ও সুযোগ নেই : ‘অ ন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রণীত অধ্যাদেশ ও কার্য ক্রমের বৈধতা’ বিষয়ে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়ে ছে, সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আই নে যা কিছুই থাকুক না কেন, নতুন সংসদ গঠিত হও য়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, সেই তারি খের মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োগ করা ক্ষমতা, অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধা নমালা, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, কর্মকাণ্ড ও গৃহীত ব্যবস্থা আইনানু যায়ী যথা যথভাবে করা এবং গ্রহণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
  • সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনো আদাল ত বা কর্তৃপক্ষের কাছে এর বৈধতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না বা একে অবৈধ বা বাতিল করতে পারবে না।
  • ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও কার্যধারা রক্ষণ’ সং ক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে– অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বা এর প্রধান উপদেষ্টা বা কোনো উপদে ষ্টাদের নিয়োগ সম্পর্কে কোনো ত্রুটি রয়েছে, কেবল এ কারণে কোনো কাজ অবৈধ হবে না বা এ সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা করা যাবে না। প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ, প্রধান উপদেষ্টা পরামর্শ গ্রহণ, সরকা রের মেয়াদ ও পদমর্যাদার বিষয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে।
  • একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং তিনি যতজন উপদেষ্টা নির্ধারণ করবেন সে সংখ্যায় উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।
  • প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাকে শপথ করাবেন রাষ্ট্রপতি। অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপে ক্ষ, অংশ গ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠা নে নির্বাচন কমিশনকে সাহা য্য ও সহায়তা দেবে।প্রধান উপদেষ্টা প্রধান মন্ত্রী এবং উপ দেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যা দা, পারিশ্রমিক ও সুযো গ–সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে নিজে লেখা ও স্বাক্ষরযুক্ত প ত্রের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদে ষ্টারা পদত্যাগ করতে পারবেন।
  • পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোনো কার ণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজ নকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন।
  • প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ গ্রহণের বিষয়ে হয়েছে, বিদ্য মান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অন্ত র্বর্তী সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতি কাজ করবেন।
  • জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার আগে তাকে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিস্বাক্ষর নিতে হবে।
  • মেয়াদ কত : এই বিষয়টি সুনির্দিষ্ট না করে সরকারের মেয়াদ বিষয়ে অধ্যা দেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, ত্রয়ো দশ জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার বহাল থাকবে।
  • এই সরকার একটি ‘অস্থায়ী বা সাম য়িক’ সরকার হিসে বে দায়িত্ব পালন করবে বলেও এতে উল্লেখ আছে।
  • বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে।’
  • নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ বিষয়ে খস ড়ায় বলা হয়েছে, অ বাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদ স্য দের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বা চন কমিশনকে সাহায্য ও সহায় তা দেবে।
  • প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা নিয়োগে অযোগ্যতা :
  • দেশের নাগরিক না হন এবং তার বয়স ২৫ বছর পূর্ণ না হয়; কোনো আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা হন;দেউ লিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি নাপেয়ে থাকে ন; কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জনকরেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।
  • নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজ দারি অপরাধেদো ষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পার না হলেও এসব পদে নিয়ো গ পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ কোলা বো রেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ১৯৭২ এরঅধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে এবং ‘ত্রয়োদশ জা তীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না’,এ বিষয়ে সম্মত না হন।
  • আগের অন্তর্বর্তীকালীন ও তত্ত্বাবধা য়ক সরকার : তিন দশকেরও বেশি সময় আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা এসেছিল দেশে।
  • ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন আয়ো জনে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছি ল অন্তর্বর্তী সরকার।
  • পরে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হলে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন হয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন।
  • তবে সবশেষ ২০০৭ সালে ১১ জানু য়ারি ফখরুদ্দীন আ হমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেয়। তবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকে প্রায় দুই বছর।
  • ২০১১ সালে এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অ সাংবিধানিক বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই বছরের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংবি ধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নবম সংসদ।