মোঃ মনসুর আলী,আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামে কুপিয়ে হত্যা মামলার পাঁচ দিনেও পুলিশ প্রধান দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কান্না থামছে না নিহত আমিনুলের বয়োবৃদ্ধ বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম ও স্ত্রী-সন্তানের। এদিকে মামলার প্রধান আসামীসহ সকল আসামী পলাতক থাকার খবরে স্বস্তি ফিরে পেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে এক-দেড় বছর ধরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে থাকা ৩০/৪০ পরিবার।
জানাগেছে, গ্রামের মসজিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও গভীর নলকুপের মালিকানা নিয়ে সৃষ্টি হয় গফুর হাজি ও তহিদুল-শাহিন গ্রুপ। প্রথমে আধিপত্য ছিল গফুর হাজির নিয়ন্ত্রনে।তাঁর মৃত্যুর পর নেতৃত্বে আসে ছেলে আব্দুল কাদের সেদ্দা। নতুন নেতৃত্বও চালাতেন নানা অত্যাচার-জুলুম। এঅবস্থায় ৭/৮ বছর পুর্বে নেতৃত্ব হারায় গফুর হাজীর ছেলে সেদ্দা। মাথাচারা দিয়ে উঠে তহিদুল-শাহিন গ্রুপ। গ্রামের মানুষকে নতুন করে শাসন করতে শুরু করে তারা।
থানা পুলিশ জানান, নতুন নেতৃত্বের স্লোগান ‘মাইরের উপর ওষুধ নাই’, আগে মারো, তারপর জরিমানা করো। প্রায় অর্ধযুগ ধরে এই ধারাবাহিকতা চালিয়ে আসছে তহিদুল-শাহিন কমিটি। ১৪ সদস্যের বিচারক কমিটির আদেশই এ গ্রামের আইন। পুলিশের মতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত আমিনুল এক সময় সেদ্দা গ্রুপে ছিল।পরে সে তহিদ-শাহিন গ্রুপে যোগ দেয়। এই গ্রুপের ১৪ সদস্যের সংঘবদ্ধ চক্র গ্রাম ও গ্রাম সংলগ্ন নশরতপুর রেলস্টেশন এলাকায় নানান অপরাধী কাজ করে আসছিলেন।
নিহত আমিনুলসহ তারা গ্রামের একটি পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধ সমাধান করে দেওয়ার নামে দুই লাখ টাকা নেয়। টাকা গুলো শাহিনের কাছে গচ্ছিত ছিল। কিন্তু ভাগবাটোয়ারা না করে নিশ্চিুপ থাকে শাহিন। ফলে বিরোধ সৃষ্টি হয় আমিনুলের সাথে। এই বিরোধ মিমাংশার জন্য বুধবার রাতে গ্রামের শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ নামক ক্লাব ঘরের সামনে সালিসী বসে। সালিসে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে শাহিনের সাথে আমিনুলের তর্কাতর্কি শুরু হয়। এতে ক্ষিপ্ত শাহিন ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
এতে মামলা হলে গ্রেফতার হয় মাত্র তিন আসামী। তহিদুল-শাহিনসহ অবশিষ্টরা পালিয়েছে গ্রাম ছেড়ে। এই সুযোগে তাদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে থাকা ওই গ্রামের আলিম উদ্দিন জানান, গ্রামে থাকতে তার কাছ থেকে ওই গ্রুপ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেছিল। চাঁদা না দেয়ায় তাকে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল। আফজাল হোসেন নামের আরেকজন জানান তিনি দেড় বছর পর শুক্রবার বাড়ি ফিরেছেন। তার কাছে ওই গ্রুপ এক লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছিল। দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রাম ছেড়ে আদমদীঘি সদরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেছি। ওই গ্রামের গামেন্টর্স ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম ও তার মা হাজেরা জানান, ওই গ্রুপের অত্যাচারে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, তিনি এখন নিঃস্ব। এঘটনার গ্রাম ছারা ভুক্তভুগিরা জানান কবে ফিরবে এগ্রামের শান্তি।