ডেস্ক নিউজ:বাংলাদেশ আবারও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) বাণিজ্য সুবিধার মেয়াদ ৩ বছরের পরিবর্তে ৬ বছর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়াটি যাতে মসৃণ হয়, তা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল এ দাবি জানিয়েছে। ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কথা আছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য নির্ধারিত বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া অব্যাহত রাখবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাওয়া দেশগুলোর জন্য এই ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশ এই সময়সীমাকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করতে চায়। এছাড়াও জেনারেলাইজড স্কিম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) নীতিমালার ১টি আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এই আইনে বলা হয়েছে, এভরিথিং বাট আর্মস (অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্য) উদ্যোগের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার যোগ্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের মূল্য যদি বাণিজ্যিক অঞ্চলের মোট আমদানির ৬ শতাংশ অতিক্রম করে, তাহলে জিএসপি মর্যাদা থাকলেও শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। বাংলাদেশ অনেক আগেই ৬ শতাংশের সীমা অতিক্রম করেছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ইইউ পার্লামেন্টের কিছু সদস্যের কাছে এ বিষয়ে দাবি জানিয়েছি, যারা বাণিজ্যিক বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যদের মধ্যে আছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও ফারুক হাসান।

ফারুক হাসান জানান, বৈঠকে বাংলাদেশে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাবের কারণে বাণিজ্যে খারাপ প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।

বৈঠকে আরো যুক্তি দেওয়া হয়, পোশাক খাত হাজার হাজার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।

ফারুক হাসান বলেন, এর আগে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ যে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিএসপি প্লাসের যোগ্যতা অর্জন করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তা ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করেছে।

সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন নিহাদ কবিরসহ বেসরকারি খাতের কয়েক সদস্য অংশ নেন বলে জানিয়েছেন ফারুক। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদও বৈঠকে অংশ নেন।

পুরোনো আমদানি-রপ্তানি মানদণ্ডে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধার আওতায় আমদানিতে কোনো দেশের অংশগ্রহণ ৭ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। যেহেতু বাংলাদেশ অন্যতম বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং এর প্রায় সব পণ্যই শুল্কমুক্ত হওয়ায় ইইউ-জিএসপি আওতাভুক্ত আমদানিতে বাংলাদেশের অংশ ৭ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।

ইইউ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে যোগ্য দেশগুলোর জন্য নতুন জিএসপি নীতিমালা চালু করতে যাচ্ছে, যা ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। প্রতিনিধি দলটির ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করে এই দাবি উত্থাপনের কথা আছে।

অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশও গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের বাণিজ্য সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তদবির চালিয়ে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *