রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ জন্ম থেকেই এক হাতের কিছু অংশে রয়েছে দুটি আঙুল। আকারেও ছোট।
অন্য হাত নেই। দুই আঙুল দিয়েই পরীক্ষার খাতা য় লিখে এসএসসি পাস করেন। কলেজে ভর্তি হলেও পারিবারিক অসচ্ছলতায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।
পরে দুই আঙুল নিয়েই জীবনসংগ্রামে নেমে পড়েন চা-পান বিক্রিতে। বলছি ঠাকুরগাঁও উপ জেলার পূর্ব মল্লিকপুর গ্রামের শারীরিক প্রতি বন্ধী একরামুল হকের (২২) কথা।
দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট একরামুল। এরই মধ্যে দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাইও বিয়ের পর আলাদা সংসার করছেন।
বাবা নজিব উদ্দিন পেশায় দিনমজুর আর মা রাহেলা বেগ মও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। একরামুল বিয়ে করায় বাবা সংসার আলাদা করে দেন।
বাবার কাছ থেকে একটি টিনের ঘর পেয়েছেন। জায়গা-জমি কিছু নেই। বাড়ির পাশে এক ব্যক্তির জমিতে চা-পানের দো কান করে সংসারের হাল ধরেন।
স্থানীয়রা জানান, জাবরহাট হেমচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ২.৮৮ নিয়ে ২০১৮ সালে একরামুল এসএসসি পাস করেন।
অভাব-অনটনের কারণে কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। এর পর তার ভগ্নীপতি তাকে ঢাকায় নিয়ে যান।
সেখানে একটি দোকানে দুবছর কাজও করেন। ঢাকায় থাকা কালে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। পরে তারা বিয়ে করে সংসার শুরু করেন।
একরামুল জানান, বিয়ের পর ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা লোন নিয়ে দুটি ছাগল কেনেন আর চা-পানের দোকান দেন। প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। সরকার থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পান।
এ দিয়েই স্ত্রী আর ১৬ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে তার সংসার চলে। ছোটখাটো একটা চাকরি পেলে চিন্তা করতে হতো না বলে জানান তিনি।
একরামুলের স্ত্রী ঈশা আক্তার বলেন, ‘ভালোবেসে তাকে বিয়ে করেছি। যতটুকু পারছি স্বামীকে সহযোগিতা করছি। আমাদের একটা মেয়ে আছে।
খরচ বেড়েছে। আমার স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুটি আঙুল দিয়ে কাজ করে কষ্ট করে সংসার চালান। সরকার বা কেউ যদি সহযোগিতা করত, তাহলে কষ্ট অনেকটা লাঘব হতো।’