স্বাস্থ্য ডেস্ক:অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রেসক্রিপশনের ওষুধের পরিবর্তে অন্য ওষুধ দিয়ে দিচ্ছে। যা সেবন করে অনেকের রোগ ভালো হওয়া তো দূরের কথা, কেউ কেউ আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তাতে সাধারণ মানুষের মনে ডাক্তার সম্পর্কে নিরূপ ধারণা জন্মে। কম হলেও এরকম ঘটনা ঘটছে। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ সালে সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের।
এই হার ২০১৩ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। এই সমস্যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বাংলাদেশেও অসংখ্য মানুষকে জীবন দিতে হয় মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনের জন্য।
পরিসংখ্যান মতে, ঘুমের ওষুধ অথবা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে এত বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমনটি নয়। ৬১ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ। যু
ক্তরাষ্ট্রে এফডিএ বা ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যাবতীয় খাদ্যপণ্য এবং ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকে। সেখানে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে কোন ওষুধ বিক্রি বা হস্তান্তর কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এরপরও এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু উদ্বেগজনক বৈকি।
দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ প্রতিরোধ-ব্যবস্থা বা প্রতিকার না নিয়ে যে কোন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন বিপজ্জনক। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বেদনানাশক ওষুধ জোগাড় করতে না পেরে মানুষ বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ে প্যাথেড্রিন, ইয়াবা, হেরোইনের মতো মাদকে। এর ফলেও অনিবার্যভাবে বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিবেচনা করা যেতে পারে আমাদের দেশের পরিস্থিতি। বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রি ও বিপণনের ক্ষেত্রে কোন আইন কানুন বা নিয়ম-নীতির বালাই নেই।
সারাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জ ও ইউনিয়নের কথা বাদ দিলেও খোদ রাজধানীতেই পাওয়া যাবে অগণিত ওষুধের দোকান।
যেগুলোর অধিকাংশই বেআইনি বা অবৈধ। মুদি দোকান অথবা হাটবাজারে, ফুটপাথে ফেরি করে ওষুধ বিক্রির নজিরও আছে। অন্যদিকে, বেশ কিছু ওষুধ কোম্পানি আছে যেগুলো মানহীন, ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বিপণন করে তাকে।
তদুপরি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতিরেকে ওষুধ বিক্রি না করার নিয়ম থাকলেও প্রায় কেউই তা মানে না বললেই চলে। হাতে বাড়ালেই যে কোন ওষুধ যে কোন দোকানে যথেচ্ছ পরিমাণ পাওয়া যায় কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ।
আর এতে শুধু ব্যথানাশক নয়, বরং ঘুমের ওষুধ থেকে শুরু করে অ্যান্টিবায়োটিক যা চাওয়া যায়, তাই মেলে। অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের কুফল আমেরিকার অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি সহজেই ।
চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে এসিডিটি কমানোর ওষুধ সেবন করলে ভিটামিন বি ১২-এর অভাবজনিত সমস্যা হতে পারে। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে থাকে রক্তশূণ্যতা, স্নায়ুর সমস্যা এবং স্মৃতিভোলা সমস্যা বা ডিমেনশিয়া ইত্যাদি।
আর যেসব ওষুধে এ ধরনের সমস্যা হয় তন্মধ্যে রয়েছে প্রটন-পাম্প-ইনহিবিটসর এবং হিস্টামিন-২ রিসিপ্টর এন্টাগনিস্ট। গবেষকগণ বলছেন, পিপিআই সেবনে ভিটামিন বি১২ অভাব স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৬৫ ভাগ বেশি হয়। এই নতুন গবেষণা রিপোর্টের আলোকে বিশেষজ্ঞগণ রোগীদের দীর্ঘ মেয়াদী এসিডিটি কমানোর ব্যবস্থাপত্র দিতে সতর্ক হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত দীর্ঘ দিন ধরে এ জাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত নয় বলেও অভিমত দিয়েছেন গবেষকগণ। যদিও আমাদের দেশের সাধারান মানুষ নিজেরাই দীর্ঘদিন ধরে এসকল ওষুধ খেয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি দুর্ঘটনা বা গোলাগুলিতে বছরে যে পরিমাণে মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে হেরোইন ও অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। সেখানে ২০১৩ সালে অতিরিক্ত পরিমাণ ওষুধ সেবনের ফলে মারা যায় ৪৬ হাজার ৪৭১ জন মানুষ।
একই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ৩৫ হাজার ৩৬৯ জন্য মানুষ। গত এক দশকে অতিরিক্ত ওষুধে মারা যাওয়ার হার বেড়েছে ৫০ শতাংশ। তাই আমাদের দেশের ডাক্তারদের প্রতি সবিনয় নিবেদন থাকবে ভাল মানের ওষুধ লিখুন এবং কতদিন খাওয়া নিরাপদ তা বুঝিয়ে বলুন। নিম্নমানের ওষুধ সেবনের বিপদ কত মারাত্মক হতে পারে তা থেকে সতর্ক করুন।
মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক,কলামিষ্ট