Breaking News

কন্যা শিশু বোঝা নয়,পৃথিবীতে আশীর্বাদ স্বরুপ।

প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম : কন্যা শিশু বোঝা নয়,পৃথিবীতে আশীর্বাদ স্বরুপ। কেননা আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে দিয়ে পৃথিবীকে সুসজ্জিত করেছেন, সুরা ইমরানে সে কথা উল্লেখ রয়েছে। যাহোক, মূল কথায় আসি,১১ অক্টোবর (Internati onal Day of the Girl Child) প্রতিবছর ১১ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় “আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস”। দিব সের পটভূমি হলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর এই দিনটি “International Day of the Girl Child” ঘোষণা করা হয়।
প্রথমবার দিবসটি  ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর পালন করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য প্রতিপাদ্য (থিম) হলো,  “The girl I am, the change I lead: Girls on the frontli nes of crisis” বাংলায় অনুবাদ করলে এমন হতে পারে —
“আমি সেই কন্যা, আমি যেই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিই : সংক টের সীমানায় থাকা কন্যারা”৷ এই ভাবে প্রতি বছরে একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে। যেমন—২০২৩ সালের থিম ছিল  “Inv est in Girls’ Rights: Our Leadership, Our Well-being”২০২৪ সালের থিম ছিল “Girls: Leading Change” ইত্যাদি।
এই দিবসের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো কন্যাশিশুর মৌলিক অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের প্রতি বৈষম্য দূর করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও নিরাপত্তায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, এবং বাল্যবিবাহ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।।
কিন্তু ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, উইঘুর সহ সারা বিশ্বে শিশুরা তাঁদে র মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যা বিশ্ববাসী নির্বাক হয়ে চেয়ে আছে, নেই কোন প্রতিকার। অথচ প্রতি বছর ১১ অক্টোবর যাচ্ছে আর আচ্ছে।
এদিকে  ইসলামী জীবন ব্যাবস্থা ১৪০০ বছর আগে কন্যা শিশুকে দিয়েছে তার মৌলিক অধিকার, সম্মান ও ভালো বাসার বিনিময়ে পরকালীন বিশ্বাসীদের জন্য জান্নাতের প্রতি শ্রুতি। সুবহানাল্লাহী ওয়াবিহামদী।
কোরআন ও হাদীসের আলোকে কন্যাশিশুকে শ্রদ্ধা ও স্নেহ করার আদেশ যেমন স্পষ্ট, তেমনি তাদের প্রতি অবহেলা বা ঘৃণা করাও নিষিদ্ধ। ইসলামী জীবন ব্যাবস্থায় কন্যা শিশুকে কীভাবে দেখা হয় সেদিকে একটু ফিরে দেখি, ইসলাম পূর্ব যুগে কন্যা জন্ম গ্রহনই ছিল অপছন্দনীয়।এক বর্বরতা ও জাহেলি প্রথার নাম।
ইসলামের আগমনে তা নস্যাৎ করেছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন “আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে ক্রোধে ভরে ওঠে। সে লজ্জায় লোকদের কাছ থেকে লুকিয়ে বেড়ায়
 ( সূরা নাহল, আয়াত ৫৮-৫৯) ইসলাম এসেছে কন্যাশিশুর অপমান রোধে এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। সৃষ্টির মর্যাদা য় নারী ও পুরুষ সমান।
এ বিষয় আল্লাহ তায়ালা বলেন – “হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক আত্মা থেকে, এবং তার থেকেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আন-নিসা  আয়াত নং ১) রাসুল (স:)  বলেন  “তোমরা তোমাদের সন্তানদের মধ্যে সমানভাবে উপ হার দাও।”— (সহিহ বুখারি, হাদীস: ২৫৮৭)
কন্যা ও ছেলে—দুজনই আল্লাহর সৃষ্টি।  মর্যাদায় কেউ ছোট বা বড় নয়। একজন আরেক জনের পরিপুরোক।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:“যে ব্যক্তি দুইটি কন্যা সন্তানকে বড় হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার সাথে জান্নাতে এভাবে থাকবে। একথা বলে (তিনি দুই আঙ্গুল একত্র করলেন)।” (সহিহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৩১) তিনি আ রো বলেন, “যে ব্যক্তি ( ঈমান আনোয়নকারীদের মধ্যে ) তিনটি কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করবে, তাদের শিক্ষা দেবে, ভালো ব্যবহার করবে এবং সৎ পাত্রে বিয়ে দেবে  তার জন্য জান্নাত বাধ্যতামূলক।”
(সুনান আবু দাউদ,) রাসূল ﷺ আরো বলেন- “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের (নারী ও কন্যা দের ) সাথে উত্তম আচরণ করে।” (তিরমিজি,  হাদীস নং ৩৮৯৫) কিন্তু আজও সমাজে কন্যা সন্তানের প্রতি অবমূ ল্যায়ন, নির্যাতন ও নানাবিধ বৈষম্য রয়েই গেছে।
তাই ইসলামী আইন ও আধুনিক মানবাধিকারের সমন্বয়ে কন্যাশিশুর মর্যাদা রক্ষা এখন সময়ের দাবি। তার আগে বিশ্বের কন্যা শিশুদের অবস্থান সম্পর্কে জেনে আসা যাক:
গাজা (প্যালেস্টাইন)  যুদ্ধ ও মানবতা বিধ্বংসী কর্মকান্ডে, শিশুদের অবস্থান কী হচ্ছে সেখানে!  সাম্প্রতিক বছর গুলি তে গাজায় তীব্র সামরিক অভিযানের কারণে শিশু হতাহার ও গুরুতর মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে ব্যাপক ধ্বংস, অপুষ্টি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস। UNICEF /জাতিসংঘ ও প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে শিশু হতাহারের উচ্চ সংখ্যা ও অসহায়তা একাধিক রিপোর্ট করা হয়েছে।
২. পশ্চিম তুর্কিস্থান / সিনজিয়াং (উইঘুরর সমস্যা)  বড় শ্বাসন তন্ত্রীয় রাজনৈতিক দলের দমন নিপীড়নে কী হচ্ছে সেখানে  চিনা কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতভাবে “নিরাপত্তা/পুনর্বা সন” নীতির আওতায় লাখো মুসলিম (উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু) আটক, ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অধিকার হরণ, এবং পরিবার থেকে জোরপূর্বক ভাবে  বিচ্ছিন্ন করার রিপোর্ট রয়েছে যা শিশুদের জন্য এক অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন।
শিশুদেরও সমাজায়ন-নিয়ন্ত্রণ ও নির্যাতনের ঝুঁকি সম্পর্কেও একাধিক  রিপোর্ট দেখা যায় ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে ক্রমাগত নি ন্দা করে আসছে।
৩. কাশ্মীর (জম্মু–কাশ্মীর অঞ্চল) — সংঘাতক্ষেত্র ও মানবা ধিকার লঙ্ঘন  হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সেখানে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক সংঘাত ও নিরাপত্তা নির্দেশনা–পদ্ধতির কারণে কাশ্মীর ভূখন্ডে শিশুদের উপর এমনকি পরিবারের উপর জোরজবরদস্তি, অদৃশ্যতা, নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে আন্ত র্জাতি ক ও বেসরকারি সংস্থা গুলো  উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশের রিপোর্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিদর্শন গুলো উঠে এসেছে।
৪. রোহিঙ্গাদের (মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থী)  বাংলা দেশে অবস্থান : ২০১৭ সালের পরে রোহিঙ্গাদেরকে গণহত্যা/নির্যাতনের অভিযোগ, গ্রাম ধ্বংস, ধর্ষণ, শিশু নিহত ও বাধ্য তিক্রমে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
লক্ষ লক্ষ শিশুকেই শরণার্থী শিবিরে অনিশ্চিত জীবনযাপন করতে হয়। আন্তর্জাতিক তদন্তে এ ধরনের সীমাহীন সহিংস তার রিপোর্ট দেখা গেছে।
এমতাবস্থায় আমাদের দ্রুত ও বাস্তবসম্মত করণীয় (আইনি, মানবিক ও নীতি–স্তরে) :
১. ইসলামী দৃষ্টিতে সচেতনতা বৃদ্ধি: সমাজে ইসলামের ন্যায় ভিত্তিক বার্তা প্রচার করা মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামিক বক্তৃতায় কন্যাশিশুর মর্যাদা ও হাদীস প্রচার করা।
২️. শিক্ষা ও আত্মনির্ভরতা নিশ্চিত: কন্যার জন্য বিনামূল্যে মাধ্যমিক শিক্ষা ও নিরাপদ স্কুলের পরিবেশ সৃষ্টি করা।শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী নৈতিক শিক্ষাকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে করণীয় :
* জরুরি মানবিক সহায়তা ও নিরাপদ প্রবেশ পথ তৈরি করা।
* জরুরিভাবে খাদ্য, পানি, ঔষধ, ত্রাণ সামগ্রী এবং শিশুদের জন্য পুষ্টি ও এক কালীন সহায়তা নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর সাথে সমন্বয়ে ‘humanitarian corridors’ খোলা। (ক্রিয়া: UN, UNICEF, ICRC, স্থানীয় এনজিও)। প্রভৃতি।
* শিশুসুরক্ষা ও মানসিক–সামাজিক পুনর্বাসন (psycho social support) যুদ্ধ/সংঘাতের ফলে ট্রমাগ্রস্ত শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্কুল-ভিত্তিক সেফ-স্পেস, পিয়ার সাপোর্ট গ্রুপ। শিক্ষা পুনরায় চালু ও অনলাইন/চলমান শিক্ষা প্যাকেজ প্রয়োগ।
## আন্তর্জাতিক আইনগত ও পর্যবেক্ষণ পদক্ষেপ :
মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ, গণহত্যা/যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত প্রমাণ রেকর্ডিং, জাতিসংঘের তদন্ত/কমিশন, আন্ত র্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) বা অন্যান্য ট্রাইবুনালে প্রমাণ উপস্থাপন। (ক্রিয়া: Amnesty, HRW, OHCHR রিপোর্ট এবং আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া)।

* কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ (sanctions ও arms-embargo)

সংশ্লিষ্ট দেশের নীতির পরিবর্তনের জন্য কূটনৈতিক এলাকা ব্যবহার, প্রয়োজনমত লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ। (ক্রিয়া: দেশসমূহ, UN নিরাপত্তা কাউন্সিল, মানবাধিকার-ভিত্তিক এক্সিকিউটিভ-অ্যাকশন)।

* নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও সিভি ল সোসাইটি মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা।
সচেতনতার ফলে নীতি পরিবর্তনে জনমত তৈরি হয়। (ক্রিয়া: NGOs, সাংবাদিকতা, আন্তর্জাতিক কমিশন)।
* যুদ্ধাবস্থার পর স্কুল পুনর্নির্মাণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, নারী-নেতৃত্বের সুযোগ বৃদ্ধি  যাতে শিশুদের দীর্ঘ মেয়াদি সম্ভাবনা ফিরে আসে। (ক্রিয়া: UNESCO, UNICEF, ডোনার সংস্থাগুলো)।

* বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলোর সক্রিয় তৎপরতা Organization of Islamic Cooperation (OIC), মুসলিম-মেজরিটি দেশসমূহ ও দ্বিপা ক্ষিক কূটনৈতিক নেটওয়ার্ককে যুক্ত করে মানবিক কনসে নাস তৈরি, রোহিঙ্গা,প্যালেস্টাইন, উইঘুর ইত্যাদি বিষয়ে কৌতুকহীন কাজ করা যেতে পারে  যেমন কনসিগার্ড সাহা য্য, লবি, আইনি সহযোগিতা। (ক্রিয়া: ডিসকোর্স, কূট নীতি, হিউম্যানিটেরিয়ান সাপোর্ট)। কীভাবে ব্যক্তি/সামা জিকভাবে সাহায্য করা যায় (ব্যবহারিক ছোটদিক)

নির্ভরযোগ্য মানবিক সংস্থায় অনুদান দিন (UNICEF, IRC, ইত্যাদি)। পরিশেষে শিশু শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী বা তহবিল দেওয়া।

নির্যাতনের প্রমাণ বা রিপোর্ট সংগ্রহে স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীকে সাপোর্ট দিন (সতর্কতার সঙ্গে, নিরাপত্তা বজায় রেখে)।

শান্তি-ভিত্তিক, আইন সম্মত কূটনৈতিক চাপের জন্য সরকারি প্রতিনিধিদের কাছে আবেদন/চিঠি/হাসিল করুন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী (UNICEF, 2024): বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটিরও বেশি কন্যাশিশু বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার।

প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ কন্যা শিশু শিক্ষা, পুষ্টি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে।  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হার প্রায় ৯৭%, তবে উচ্চ বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার কন্যাদের মধ্যে বেশি। ইসলাম শুধু কন্যা শিশুর জন্মে আনন্দ করতে বলেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং তাদের শিক্ষা, উত্তরাধিকার ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করেছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে ছিলেন কন্যার পিতা — এবং তিনি কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন।
আজকের এই আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় —
কন্যা কোনো বোঝা নয়, কন্যা হলো জান্নাতে যাওয়ার ওসিলা।

লেখক : প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম,(সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।

তথ্যসূত্র (References)
1. The Holy Qur’an: সূরা নাহল ১৬:৫৮-৫৯, সূরা নিসা ৪:১
2. Hadith: সহিহ মুসলিম (২৬৩১), আবু দাউদ (৫১৪৭), তিরমিজি (৩৮৯৫, ১৯১৪), বুখারি (২৫৮৭)
3. UNICEF (2023-2024) — The State of the World’s Children Report
4. Bangladesh Bureau of Statistics (BBS), Child Marriage Survey 2023
5. National Women Development Policy, Bangladesh, 2011
6. WHO & UN Women joint statement, International Day of the

About admin