মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
কথায় আছে, ধারদেনা আর খরচের বোরো ধান। ইতোপূর্বে চাষ পর্ব শেষ। দুু’এক দিনের মধ্যেই অনেকে কাটা শুরু করবে। কিছু ক্ষেতে লাগবে আরও কয়টা দিন। তারপরও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সব ধান ঘরে উঠানো যাবে। তখন কৃষক পরিবারগুলো আনন্দে ভরে উঠবে।
অন্তত কয়েক মাসের জন্য হলেও মিটবে তাদের প্রায় সব অভাব। এমন আশা ছিল গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোতে। কিন্ত সে আশা আর কপালে সইল না তাদের।
কেননা সোমবার বিকালে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। কিছুক্ষনের মধ্যে সমানে পড়তে থাকে শিলাবৃষ্টি। কয়েক মিনিটের তান্ডবে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের আংশিক কয়েকটি গ্রাম,ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম, পাশ^বর্তী পশ্চিমে কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের এলাঙ্গী, নওদা গ্রাম, ও বলাবাড়িয়াসহ কয়েকটি গ্রাম, পূর্বে যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া ও স্বরুপপুরসহ এ এলাকার কমপক্ষে ২০ টি গ্রামের মাঠের বোরো ধানের সর্বচ্চ ক্ষতি হয়ে হয়েছে।
একই সাথে মাঠের পাট, কলা, আম লিচু ও সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড তাহদাহের মধ্যে বয়ে যাওয়া ঝড় বৃষ্টি কৃষক ও সাধারন মানুষসহ প্রাণীকুলের জন্য আর্শিবাদ হলেও উল্লেখিত এলাকায় ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত জানাতে পারেনি জেলা কৃষি অফিস।
কয়েকটি গ্রামের মিলে মোট এ অঞ্চলের বিশ- বাইশটিরও অধিক গ্রামের ওপর দিয়ে এ ধবংসযজ্ঞ বয়ে গেছে। একমাত্র কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের মাঠের পর মাঠের বোরো পাকা ধানের গাছগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত শিলাবৃষ্টি পড়ে কৃষকের কপাল পুড়েছে। ক্ষেতের সোনালী ধান গাছগুলো এখনও দাড়িয়ে থাকলেও শীষে একটি ধানও নেই। সব ধান ঝরে ক্ষেতে পড়ে গেছে।
মঙ্গলবার সকালে ওই এলাকাটিতে গেলে গেলে দেখা যায়,কালীগঞ্জের সিমলা,বালিয়াডাঙ্গা, গবরডাঙ্গা, ধলা, দাঁদপুর,শাহপুর ঘিঘাটি,চাঁদবা, একতারপুর, কালুখালী, আজমতনগর, মধুপুর, ত্রিলোচনপুরসহ বেশ কিছু গ্রামের ফলজ ক্ষেতের,সব ধরনের বানিজ্যিক ফুল ও সবজির মাচা মাটিতে মিশে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। ধরন্ত কলা গাছ বেশিরভাগই ভেঙে গেছে। সবুজ পাট গাছের কান্ড আছে কিন্তু মাথা নেই। ধরন্ত আম গাছের তলায় ঝরা আমের জালিতে ভরাট হয়ে আছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ির যেগুলো ক্ষতি হয়েছে সেগুলো সংখ্যায় খুব বেশি নয়। তবে তা মেরামতে তেমন একটা গুরুত্বও দিচ্ছেন না তারা। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ভাষ্য, না হয় গাছতলাতে থাকবো তাও তো বাঁচা যাবে। কিন্ত ধানসহ মাঠের সব ধরনের ফসল শেষ হয়ে গেছে। এখন খাবো কি ?
ত্রিলোচনপুর- গোবরডাঙ্গা মাঠে দেখা হয় শামছুল – মোমেনা দম্পতির। তারা নিজেদের ক্ষেতের শিলাবৃষ্টিতে ঝরে যাওয়া ধান হাত দিয়ে কুড়াচ্ছেন আর টানা নিঃশ^াস নিচ্ছেন। চোখের পানি ফেলছেন। তারা জানান, খুব কষ্ট করে মাঠে ২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের ধান চাষ করেছিলেন। কমপক্ষে ৫০ মন ধান পাওয়ার আশা ছিল এখন সব শেষ হয়ে গেছে।
দাদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, ৪ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করে কমপক্ষে ১’শ মন ধান পাওয়ার আশা ছিল। সোমবারের কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে শিষ থেকে সব ধান ঝরে গেছে। তিনি বলেন, বৃষ্টির শেষে কৃষকেরা সবাই মাঠে গিয়ে দেখেন ধান গাছের পাতা পর্যন্ত শিলার আঘাতে চিরে চিকন খড়ের রুপ ধারন করেছে।
তিনি বলেন,এমন ক্ষতির পর মাঠে মাঠে কৃষকের বুকফাঁটা আহাজারি চলছে। আবার কেউ কেউ মনের কষ্টে মাঠের দিকেই যাচ্ছেন না। এলাকাজুড়ে এখন কোন মানুষের মুখে হাসি নেই। কেননা এ আবাদে একটি ধানও তাদের ঘরে আসবে না।
বেলেডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, তার এ বছর ২ বিঘা জমিতে সরবি জাতের কলা ছিল। সব গাছগুলোতে কাঁধি হয়েছিল কিন্ত ঝড়ে এখন আর কোন কলাগাছ সোজা নেই। সব ভেঙে গেছে।
তিনি বলেন, তাদের আশপাশের কয়েক গ্রামের পেয়ারা, আম, পেপে, বানিজ্যিক ফুল, যাবতীয় সবজির যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতি সহজে কাটিয়ে উঠা যাবে না। আর এ বছর মাঠ ধরেই পাকা কাঁচা ধান ক্ষতিগ্রস্থ। তিনি আরও বলেন কৃষকেরা মনের কষ্টে এখন বসে টানা নিশ^াস ছাড়ছেন।
কৃষিকর্মকর্তারা জানান, সোমবার বিকাল ৩ টায় বয়ে যাওয়া কালাবৈশাখী ঝড় এবং সাথে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এতে যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া ও স্বরুপপুর মাঠের সামান্য অংশ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন ও কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নসহ কিছু এলাকায় ফসলের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকাা করছি। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের মাঠে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা আজগার আলী জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে আছি। এখনি বলতে পারছি না কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে শিলাবৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় কৃষক এমন ক্ষতি হয়েছে যা বর্ণনা করার মত নয় বলে যোগ করেন এ জেলা কৃষি কর্মকর্তা।