মফিজুল ইসলাম,শৈলকুপা(ঝিনাইদহ) থেকে ঃ বাংলাদেশে সব পেশারই দু-একটা করে সমিতি রয়েছে। পেশাজীবী সমিতি, শিক্ষক সমিতি, সাংবাদিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতিসহ আরও কত সমিতি। তবে অন্য রকম এক সমিতির খোঁজ মিলেছে।
এ সমিতির কথা শুনে যে কেউ অবাক বনে যাবে। যাঁরা কখনো শোনেননি, তাঁদের কাছে অদ্ভুত মনে হবে। সেই সমিতির নাম গরিবের গোশত সমিতি।
এ সমিতির নিয়মকানুনও অদ্ভুত। ঈদুল ফিতরের ঈদ ঘিরে ঝিনাইদহের শৈলকুপার বিভিন্ন এলাকায় এ রকম অসংখ্য সমিতি গড়ে উঠেছে।
যার নাম গরিবের গোশত সমিতি। ব্যাপক সাড়াও ফেলেছে এটি।
জানা যায়, শৈলকুপার মনোহরপুর গ্রামের তরুণ আবু জাফর ২০১৮ সালে এমন সমিতি করার উদ্যোগ নেন। মোট ২৬ জন সদস্য নিয়ে তাঁদের গোশত সমিতির যাত্রা শুরু হয়। সেখানে চাঁদা গুনতে হয় প্রতিদিন ১০ টাকা করে। এই টাকা জমিয়ে ঈদের কয়েকদিন আগে কেনেন গরু। ঈদুল ফিতরের আগের দিন অথবা ঈদের দিন ভোরে গরু জবাই করে গোশত বন্টন করেন এই সমিতির সদস্যদের মাঝে। তাতে জনপ্রতি ৬-৭ কেজি গোশত মেলে।
এরপর থেকে এলাকায় একে একে গড়ে উঠতে থাকে গরিবের গোশত সমিতি। খোদ মনোহরপুর গ্রামেই এবছর ৫টি সমিতি রয়েছে। এছাড়া দামুকদিয়া,বিজুলিয়া,পাইকপাড়া সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ সমিতি গড়ে উঠেছে।
উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এসব সমিতি ঈদের সময় গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের গোশতের চাহিদা পূরণ করছে। সারা বছর একটু একটু করে সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন মাংস সমিতির সদস্যরা। এতে ঈদে গরিব পরিবারগুলো বাড়তি আনন্দ পায় এবং তাদের আর্থিক চাপও কমে যায়।
শৈলকুপা উপজেলায় ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এ ধরনের মাংসের সমিতি গঠন করা হয়। মাংস সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিবছর বাড়ছে মাংস সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫০ জন থেকে ১৫০ জন পর্যন্ত ।
প্রত্যেক সদস্য সপ্তাহে নির্দিষ্ট টাকা চাঁদা জমা দেন। ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে জমা করা টাকায় গরু কিনে এনে জবাই করে সদস্যরা মাংস ভাগ করে নেন। শুধুমাত্র পা,ভ’ড়ি ও চামড়া বিক্রি করে দেয়া হয়। সেই টাকা আবার ফান্ডে জমা করা হয়।
এমন সমিতির খবর ছড়িয়ে পড়ায় বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে এই গোশত সমিতি। এ সমিতি এখন গরিবের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে।
কথা হয় সমিতির সদস্য মনোহরপুর গ্রামের নাসির মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এ সমিতি হওয়ায় গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য ভালো হয়েছে। মাসে ৩০০ টাকা দিতে কষ্ট হয়না। ঈদ আসলে বাড়তি চিন্তাও থাকে না।
উদ্যোক্তা আবু জাফর জানান, প্রথমে তাঁদের সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ছিল ২৬ জন।
প্রত্যেকে সপ্তাহে টাকা জমা দিতেন। বছর ঘুরে সমিতিতে জমা হওয়া টাকা দিয়ে গরু কিনে এনে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেকের ভাগে ৬-৭ কেজি করে মাংস পড়ে। প্রতিবছরই বাড়ছে তাদের সদস্য সংখ্যা। এবছর তার সমিতিতে ১৩২ জন সদস্য রয়েছে। ফান্ডে টাকা জমা হয়েছে ৪লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ টাকা। ইতোমধ্যে গরু কেনা শুরু হয়েছে।
বর্তমানে তাদের এলাকাতেই এ ধরনের অন্তত ৫টি সমিতি রয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে এই গোশত সমিতি।