চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মা ণ প্রকল্পের প্রতিবাদে কাফনের কাপড় পরে এবং বিষের বো তল হাতে নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে সরেজমিনে তদন্তে আসে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
এ সময় গ্রামের কৃষক-কৃষাণিরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।
সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে তদন্তে আসেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম, বিদ্যুৎ বিভাগের (নবায়নযোগ্য জ্বালানি-১) উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য আলী আফরোজ, তদন্ত কমিটির সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরি চা লক বিভাস চন্দ্র সাহা ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশা সক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমান।
এ সময় কৃষকদের বিক্ষোভে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় হলে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠের জমি খাদ্য উৎপাদনে কৃষি সমৃদ্ধ মাঠ। এ জমিতে সব ধরনের ফসল ফলানো হয়।
কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই গ্রামের ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সিঙ্গা পুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’।
ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলি। সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন।
পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। যার মধ্যে ৬০ শতাং শই কৃষিজমি। এ ছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান ও অন্যান্য স্থাপনা।
মাঠের জমিতে ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধর নের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকা লীন শাকসবজি চাষ করা হয়।
সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে গ্রামের নারী-পুরুষ একত্র হয়ে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে গ্রামের প্রবেশমুখে মানববন্ধন করছেন।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় তদন্ত কমিটি দল গ্রামে পৌঁছালে গ্রামবাসী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বি ক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
পরে তদন্ত দল ওই গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখেন। এ সময় উপ স্থিত ছিলেন, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়া রম্যান হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ, জীবননগর থানার ওসি এস এম জাবিদ হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তদন্ত শেষে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম বলেন, এই ধরনের জমিতে কী ধরনের ফসল হয়,
এলাকাবাসী কী চায়, আমাদেরকে এটা তদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
আমরা জমি দেখলাম, এখানকার কৃষি অফিসারের কাছে তথ্য নিয়েছি, আপনাদের কথাও আমরা শুনলাম। সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা একটি প্রতিবেদন দেব।
এদিকে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কৃষি কাজ করে খাই। আমাদের মাঠে বছরে তিনটির অধিক ফসল চাষ হয়।
আমাদের মাঠে ভুট্টা, ধান, পাট, আলু, পেয়া রা, বাদাম, সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়।
আমরা জীবন দিতে রাজি আছি, কিন্তু আমাদের মাঠ দিতে রাজি নাই।