্আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছা বদরুদ্দীন মুসলিম (বি এম) হাইস্কুলের কোচিং বানিজ্যের টাকা জোগাতে অভিভাবকেরা হিমশিম খেলেও সেই টাকায় বিলাসী জীবন যাপনের জন্য অট্টালিকা তৈরী করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ। তার কোচিং বানিজ্যের মুল সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন আপন ভাইপো স্কুলের সহকারী শিক্ষক বেনজির রহমান ও ৩য় স্ত্রীর ছোট বোন প্রধাণ শিক্ষকের শ্যালিকা ও স্কুলের খন্ড কালীন শিক্ষক তাহমিনা খাতুন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ ৩৫ হাজার টাকার সরকারি বেতনে চাকরি করেও কমিটি থেকে প্রতি মাসে বেতনের নামে ৩০ হাজার টাকা, কন্টিজেন্সি বাবদ ৫ হাজার টাকা স্কুল থেকে নিয়েও ক্ষ্যান্ত না হয়ে বিদ্যালয়ের কোচিং থেকে প্রতিমাসেই প্রায় লক্ষাধিক টাকা উত্তলণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে খরচের অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা কাজ না করেই তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। তার এই সব বিষয়ের উপর কোনো কেউ তথ্য চাইলে তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে সবাইকে দামিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।
এই প্রধান শিক্ষক সুযোগ পেলেই সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে বক্তব্য দেন। বি এম স্কুলে তার কোচিং বানিজ্যের মুল সিন্ডিকেটের হাতিয়ার হিসেবে আছেন আপন ভাইপো স্কুলের সহকারী শিক্ষক বেনজির রহমান ও ৩য় স্ত্রীর ছোট বোন প্রধাণ শিক্ষকের শ্যালিকা ও স্কুলের খন্ড কালীন শিক্ষক তাহমিনা খাতুন।
ভাইপো বেনজিরের কাছে যে সমস্ত শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে, স্কুলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষক কথা বলতে পারেন না। সম্প্রতি ইভটিজিং এর বলি হওয়া ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনি রায়কে যারা হেনস্তা করেছিলো তারা বেনজির এর ছাত্র।
এ সকল ছাত্রদের কোনো শিক্ষক শাসন করতে গেলে তখন বেনজির তার আপন চাচা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদকে দিয়ে উক্ত শিক্ষককে শায়েস্তা করান। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অশোভন আচরণ দেখলেও কিছু বলতে পারেন না।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের আপন শ্যালিকা তহমিনা খাতুন তার স্বামীর সাথে থাকলেও গত ডিসেম্বরে তাকে স্বামীর কাছ থেকে নিয়ে নিজের বাড়িতে এনে রেখে স্কুলে খন্ড কালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কোচিং ও অন্য শিক্ষকদের উপর খবরদারী করাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন উক্ত স্কুলেরই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকবৃন্দ।
স্কুলে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ইংরেজি শিক্ষিকা থাকলেও তাকে বাদ দিয়ে ৭ম শ্রেণির বি-২ গ্রুপের শ্রেণি শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন কোনো রকম পেশাদারি প্রশিক্ষণ ছাড়াই তার আপন শালী তাহমিনা খাতুনকে। প্রথমে শ্যালিকাকে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দিতে ব্যার্থ হয়ে পরবর্তীতে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষক।
স্কুলের নিয়মিত শিক্ষক মনিরা পারভিন এর কোচিং ক্লাস কেড়ে প্রধান শিক্ষকের ধর্মমেয়ে বা মেয়ে হিসেবে পরিচিত স্কুলের আরেক খ-কালীন শিক্ষক রাবিয়া খাতুনকে। বিভিন্ন শ্রেণিতে নিজের পছন্দের দলীয় সমর্থক দেখে খন্ড কালীন শিক্ষকদেরকে শ্রেণি শিক্ষক বানিয়েছেন যেটা নিয়ে স্কুলের নিয়মিত শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজমান। যদিও প্রধান শিক্ষকের ভয়ে কেউ সরাসরি মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সামাদ বলেন, কোচিং থেকে আমি যে পরিমাণ টাকায় নিচ্ছি সেটা আমার পারিশ্রমিক হিসেবে নিচ্ছি। আমি কোচিং থেকে ১০ % ও শিক্ষকরা খুশি হয়ে আমাকে ৫% অর্থ দিয়ে থাকে। আর আমার গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রয় করে সেই টাকা দিয়ে এখানে বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা।
তবে কোচিং সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালায় কোচিং থেকে প্রধাণ শিক্ষকের পারিশ্রমিক নেওয়ার কথা উল্লেখ নাই।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি সভাপতি হওয়ার পর থেকেই স্কুলের ডেভেলপমেন্ট এর জন্য কাজ করে চলেছি। আর্থিক বিষয় গুলো সব প্রধান শিক্ষক জানেন।
এবিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কোচিং থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক এই টাকা কিভাবে নিচ্ছেন সেটি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।