রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের মধ্যে চেতনানাশক ছিটিয়ে সম্পদ লুন্ঠনকারি টিমের সকল সদস্যকে একে একে গ্রেপ্তার করে প্রশংসায় ভাসছেন ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নাবিউল ইসলাম। সমপ্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে চেতনানাশক ছিটিয়ে ও খাদ্যের মধ্যে মিশিয়ে দিয়ে পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করে ওই পরিবারের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছিলো একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এতে অনেকটাই অস্বস্তির মধ্যে পড়েছিলো ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ।

একই কায়দায় জেলায় পর পর ৬টি চুরির ঘটনায় হরিপুর থানায় একটি ও রাণীশংকৈল থানায় দুইটি মামলা রজু হয়। কিন্তু মামলা তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় এবং এ জাতীয় চুরি বন্ধে ও ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জের মাধ্যমে দায়িত্ব দেন গোয়েন্দা শাখার এসআই নাবিউল ইসলামকে। এদিকে দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই কাল বিলম্ব না করে এসআই নবিউল ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামেন।

প্রথমেই তিনি আন্ত:জেলা চোর চক্রের মূলহোতা আ: রহিমকে আটক করেন। আর তার কাছ থেকেই মিলে এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম-ঠিকানা। জানতে পারেন এই চক্রটি কিভাবে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের বাসা বাড়ীতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে কিভাবে বাড়ীর গ্রিল কেটে, দরজা ভেঙ্গে সম্পদ লুন্ঠন করা হয়।

এরপর চক্রের মূলহোতা আ: রহিমকে সাথে নিয়ে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ, বোচাগঞ্জ, কাহারোল ও ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে একে একে মো: সুজন আলী, আব্বাস আলী, মো: শাহিনুর ওরফে মাহিন, সুধাংশু ওরফে দাদু, বিরেন ও মো: সহিরুল নামে এই চক্রের আরও ৬জনকে আটক করেন এবং উদ্ধার করেন চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ও চেতনানাশক ঔষধ এবং ঔষধ বানানোর সরঞ্জামাদি। পরে আটক সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই নবিউল।

এ বিষয়ে এসআই নাবিউল জানান, মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম থেকেই আমি একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করি এবং এতে সফলতাও আসে।

এই চক্রের মূল হোতা আ: রহিমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে এসে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় এই ধরণের চুরির ঘটনা ঘটায়। পরে তার দেয়া তথ্য মতে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এই চক্রের আরও ৬ সদস্যকে আটক করি।

তিনি জানান, এই চক্র এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে রাতের বেলা তাদের বাসাবাড়ীতে গিয়ে রান্না ঘরে রতি খাবার লবন ও হলুদের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে আবার আগের স্থানে রেখে দেয়। পরদিন রাতে ওই বাড়ীর জানালা, দরজা, গ্রীল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে সোনা-দানাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে এবং তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে নেয়।

নাবিউল আরও জানান, এই চক্রটির চেতনানাশক তৈরীর কারিগর হলো সুজন আলী নামে এক যুবক। সে তার নিজস্ব ফর্মুলায় ঘুমের ওষুধ রিভো-২- ৬০টি ট্যাবলেট এবং সিজোপিন ১৫টি ট্যাবলেট একত্রে করে তা রুটি বানানো বেলনার দ্বারা গুড়ো করে পুড়িয়া বানিয়ে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সাপ্লাই দেয়।

এই অতি মাত্রার ঘুমের ওষুধ অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভোগে।

এসআই নবিউল জানান, চেতনানাশক চোর চক্রের মূলহোতা সহ সাতজনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করতে পেরেছি, এটা আমার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। কেননা জেলা পুলিশের কর্ণধার মান্যবর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন।

আমি সফল হয়েছি-এটাই আমার বড় পাওয়া। তবে আমার একটি ম্যাসেজ রয়েছে জেলাবাসীর জন্য-সেটা হলো, আপনারা আপনাদের খাদ্যদ্রব্য কখনোই উন্মুক্তভাবে রাখবেন না। সেটার যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তাহলে এ ধরণের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।

এ বিষয়ে জেলা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো: আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জেলা ডিবি পুলিশের একজন চৌকষ অফিসার নাবিউল ইসলাম। তিনি দিনরাত শ্রম দিয়ে এই চক্রটির মূলহোতা সহ সাতজনকে গ্রেফতার করতে সম হয়েছেন। আমি ডিবি পুলিশের প থেকে তার এ কৃতকার্যের জন্য সাধুবাদ জানাই।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চেতনানাশক খাইয়ে বাড়ীর সদস্যদের অজ্ঞান করে চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ডিবি পুলিশের এসআই নাবিউল ইসলামকে তদন্ত ভার দেওয়া হয়।

তিনি দ্রুত এ বিষয়ে পদপে নেওয়ায় এই চক্রের সাতজনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। তবে আমরা আশা করবো কোনো ধরণের খাদ্যদ্রব্য যাতে উন্মুক্তভাবে না রাখি-এটি সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। এই ধরণের চুরির ঘটনা রোধে সকলকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *