রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃদেশের বিভিন্ন জেলায় সমলয় পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হলেও সর্ববৃহৎ সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষ হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জেলার উপজেলার নেকমরদ গ্রামের ৭ জন কৃষকের ১১০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে বোর ধান।
কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, কম সময়ে, কম খরচে অধিক উৎপাদন ও শ্রমিক সংকট নিরসনে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
এছাড়াও ফসল কাটার সময় শ্রমিক সংকট এখন বাংলাদেশে নিত্যবছরের সমস্যা। শিল্পায়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে কয়েক দশক ধরে মানুষ শহরমুখী। তাই প্রতিনিয়ত কমছে কৃষি শ্রমিক। সামনে এ সংকট আরও বাড়বে। এর একটা সমাধান হতে পারে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও সমলয় চাষ।
বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার একটি হচ্ছে সমবায়ভিত্তিক সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি। অপরদিকে কৃষকরা অভিযোগ করেন যে ধান চাষ লাভজনক নয়।
এটিকে লাভজনক করার অন্যতম উপায় হলো উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা। আর উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করতে হলে বিকল্প নেই সমলয় চাষের। চারা উৎপাদন থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ফসল উৎপাদনের প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে মেশিনের ব্যবহার। সিড সোইং মেশিনের সাহায্যে ট্রেতে ধানের বীজের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়। এরপর রাইস ট্রান্স প্লান্টার মেশিনের সাহায্যে সেই চারা জমিতে বপন করা হয।
এতে সনাতন পদ্ধতিতে একর প্রতি খরচ হতো ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা। মেশিনের মাধ্যমে চারা রোপণ করায় খরচ হচ্ছে আর ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।
জমিতে সেচের মাত্রা পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে ইউ ডি পাইপ। এতে পাঁচটি সেচের খরচ কমেছে বলে জানান কৃষক। এই পদ্ধতিতে ধান কাটা হবে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে যেখানে কর্তন ও মাড়াই একই সঙ্গে করা হবে। সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষের পাশাপাশি জমির আইলে লাগানো হয়েছে লাউ, ঝিঙ্গা ও কুমড়ার গাছ।
এতে পূরণ হচ্ছে পারিবারিক সবজির পুষ্টি চাহিদাও। সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে একই জমিতে বোরো আউশ আমন তিনটি ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি জমির নিবিরতা। ফসলের পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হওয়ায় কমছে কীটনাশক খরচ।
সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করা কৃষক আখলাক হোসেন, মজিবর রহমান, মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা আগে এ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমরা যে যার মতো আলাদাভাবে চাষাবাদ করতাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে আমরা এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরে আগ্রহ প্রকাশ করি।
সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করে একদিকে আমাদের যেমন কৃষি শ্রমিকের সংকট নিরসনসহ সেচ খরচ কমেছে। অন্যদিকে আমরা একই সময়ে ফসল ঘরে তুলতে পারব এবং উৎপাদনও অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বেশি হবে আশা করছি।
ফলে দামও পাব ভালো। এছাড়াও এ পদ্ধতিতে আমরা ফসলের মাঠের আইলে লাউ, ঝিঙা, কুমড়াসহ নানা বাড়তি ফসল ও সবজির চাষ করে একটা বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও আমরা সার ও বীজে ভালো ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ ভোরের ডাককে বলেন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও কম সময়ে অল্প করচে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের লক্ষে সরকার যে প্রোজেক্ট গ্রহণ করেছে তাতে আমাদের এ প্রোচেষ্টা একটা বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
কারণ আমাদের এটিই দেশের সর্ববৃহৎ সমলয় পদ্ধতিতে চাষের মাঠ। বর্তমান সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া হয়েছে নানা প্রকল্প।
পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করতে দক্ষ জনবল তৈরিতে এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ তৈরি করা হয়েছে। ফলে আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকেই যাচ্ছে। ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষ করলে যন্ত্রের ব্যবহার সহজ হবে। কৃষকের সময়, শ্রম ও খরচ কমবে। কৃষক লাভবান হবেন। এতে বাঁচবে কৃষক,বাঁচবে দেশ।