রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ ঠাকুরগাঁওয়ে ফসলি মাঠ হয়ে উঠেছে সবুজে ঘেরা। যতদূর চোখ যায়, ভুট্টা গাছের সবুজ রং ও সাদা ফুল। পোলট্রি খাত, হাস-মুরগি, গবাদি পশু ও মানুষের খাদ্যের তালিকায় ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। মাঠেও পরিবর্তন এসেছে। যেখানে গম চাষ করা হতো সেখানে চাষ করা হচ্ছে ভুট্টা। বেশ ভালো ফলনও হচ্ছে এই ফসলের। গমের চেয়ে তিনগুণ হচ্ছে ফলন।
গতবার ভুট্টা চাষ করে ভালো লাভ পেয়েছেন কৃষকরা। তাই এবার ব্যাপক হারে চাষ করেছেন। জেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভুট্টার চাষ। এছাড়াও এবার যারা আলু চাষ করেছেন তারা আলু তুলে আবার রোপন করেছেন ভুট্টা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ও গত বছরের মতো এবারও দাম পেলে ভুট্টা চাষে এ বছর অধিকহারে লাভবান হওয়ার আশা ও স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
জেলার গিলাবাড়ি গ্রামের কৃষক শাহিন ইকবাল ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের দিকে ভুট্টার গাছ পালা ও গাছে ভুট্টার মোচা ভালো এসেছে। আল্লাহ সহায় থাকলে এবার ভুট্টাতে কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারবো।
ভুট্টা চাষি লোকমান আলী বলেন, গম ও আলুতে তেমন লাভ না হওয়ায় জেলার অধিকাংশ কৃষক চাষ করেছেন ভুট্টা। ৫০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আর পরিচর্যা অনুযায়ী ফলন হয় কমপক্ষে ৮০-১০০ মণ। কারও কারও এর চেয়েও বেশি ফলন হয়। এক বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রিয় হয় কম পক্ষে ৮০-৯০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে গম হয় মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকার। তাই গমের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভ পাওয়ায় ভুট্টার চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলার মন্ডলপাড়া গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, ‘আমি গতবার ভুট্টা চাষ করেছিলাম ৩ বিঘা জমিতে। দাম ভালো পাওয়ায় এবার চাষ করেছি ৫ বিঘাতে। গাছের চেহেরা খুবই ভালো আছে তাতে আবহাওয়া ভালো থাকলে গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি ফলন হতে পারে।
উপজেলার কুমরগঞ্জ এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, কৃষকরা ব্যাপকভাবে ভ্ট্টুার আবাদ করেছেন। গত বছর আমি ৮০ কেজি ওজনের কাচা এক বস্তা ভুট্টা বিক্রি করেছি ২ হাজার ২শ’ টাকায়। এবারও যদি এমন দাম থাকে তাহলে কৃষকরা ভ্ট্টুাতে অনেক লাভবান হবে।
উপজেলার হরিণমারি এলাকার কৃষক সমসের আলী বলেন, আলু করে শুধু লস হয়। দাম তেমন পাওয়া যায় না। গেলবার ভ্ট্টুার দামে ভালো ছিল। তাই আমিও এবার আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছি।
হরিপুর উপজেলার কামাপুর গ্রামের কৃষক মনসুর আলী বলেন, গতবছর ভ্ট্টুা চাষ করে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এবার বেশি করে ভুট্টা চাষ করেছেন। যে আমাদের পরিবার থেকেই শুধু ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছি ভুট্টা। আশা করছি এবার ভুট্টার দাম ভালো পাবো। কারণ যেহেতু বর্তমানে সবকিছুর দামে বেশি তাই আশা করি ভুট্টার দামও বেশি পাবো।
জেলায় মোট ১ লক্ষ্য ৫১ হাজার ৫৯৩ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে চলতি মৌসুমে শুধু ভুট্টা চাষ হয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৩৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন ভুট্টা। এক বছরের ব্যবধানে জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে গম চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টও জমিতে অথচ গতবছর চাষ হয়েছিল প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর। এক বছরে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে গমে আবাদ কমেছে। এছাড়াও গত মৌসুমে জেলায় আলু চাষ হয়েছিল ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর কিন্তু এবার তা কমে হয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ হেক্টর আবাদ হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গম ও আলুর থেকে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ ভুট্টার চাহিদা, বাজার মূল্য ভালো থাকায় এবং একই পরিমাণ জমিতে গমের তুলনায় ভুট্টার ফলন প্রায় তিন গুণ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশা করছি চলতি মৌসুমে ১ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১১ টন করে জেলায় মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদ হবে। আমরা জেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের ভুট্টা চাষে সেচ, রাসায়নিক প্রয়োগসহ পোকা রোধের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।