আলিফ হেসেন,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর তানোরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং অধ্যক্ষের (ভারপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘনের খবর জানাজানি হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক এটাকে আদালত ও ভাইস-,চ্যাঞ্চেলরকে অবমাননার সামিল বলে মনে করছে।
জানা গেছে, নীতিমালা অনুযায়ী তালন্দ কলেজ পরিচালনা কমিটিতে একজন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসককে সদস্য করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্ত্ত বিশেষ ব্যক্তির মনোবাসনা পুরুণে নীতিমালা লঙ্ঘন করে একজন কথিত চিকিৎসক সুমন কুমার পালকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়।
এঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর পিয়ারুল হক উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন। এরই প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কথিত চিকিৎসককে অব্যাহতি দিয়ে একজন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসককে সদস্য করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।
কিন্ত্ত কলেজ কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার মুজমদার ও অধ্যাক্ষ ডক্টর জসিম উদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে কথিত চিকিৎসককে এখানো কমিটিতে রেখেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আদালতে রীট আবেদনকারী সাবেক কাউন্সিলর পিয়ারুল হক। স্থানীয় অভিভাবক মহল এই ঘটনাকে আদালত অবমাননার সামিল দাবি করে আদালত অবমাননার দায়ে সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিচার চেয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা কমিটিতে একজন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসককে সদস্য করার বাধ্যবাধকতার কথা বলা আছে। কিন্ত্ত কলেজ কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষ জালিয়াতির মাধ্যমে সুমন কুমার পালকে চিকিৎসক দেখিয়ে কমিটির সদস্য করেছেন।
এঘটনায় এলাকাবাসীর পক্ষে তানোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (সাবেক) পিয়ারুল হক উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন। যাহার রীট পিটিশন নম্বর ৮৪৩২/২০২২।এরই প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এবিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এদিক চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৭৭৫২ নম্বর স্বারকে ভাইস চ্যান্সেলরের আদেশক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত পত্র দিয়ে কথিত চিকিৎসক সুমন কুমার পালকে অব্যাহতি দিয়ে একজন রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসককে কমিটির সদস্য করতে বলা হয়।
কিন্ত্ত উচ্চ আদালত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেননি সভাপতি ও অধ্যক্ষ। এবিষয়ে জানতে চাইলে রীট আবেদনকারী পিয়ারুল হক জানান, তিনি যতটুকু জানেন এখনো কমিটির সদস্য পদে সুমন কুমার পালকে বহাল রেখেছেন।
তিনি দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, উচ্চ আদালত ও ভাইস চ্যান্সেলরের আদেশকে তারা যদি বৃদ্ধাঙ্গলী দেখায় তাহলে কি বলার আছে। এবিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডক্টর জসিম উদ্দিন জানান, সভাপতি অসুস্থ এজন্য মিটিং করা হয়নি। তবে দ্রুত মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আপনি মিটিং করতে পারেননি সেটা কি আদালত বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।
তাহলে এতে আদালত বা ভাইস-চ্যাঞ্চেলরকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অবমাননা করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদোত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। এবিষয়ে।কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার মজুমদার জানান, এতদিন সিদ্ধান্ত হয়ে যেত, মিটিং দেওয়া যায়নি আমি অসুস্থ এজন্যে।
আর সুমন কুমার পালকে মৌখিক ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে, শুধু সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে চিকিৎসক না হয়ে কমিটিতে কিভাবে এসেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি সভাপতি হওয়ার আগ থেকে সে কমিটিতে আছে।
এবিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানার ০১৭১১৫৬৩৪০০ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখনতো অফিস সময় না, কাগজপত্র না দেখে কিছুই বলা যাবে না।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে আপনার স্বাক্ষরিত আদেশে সুমন কুমার পালকে বাদ দিয়ে প্রকৃত চিকিৎসক কে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলা হয়েছে, কলেজ এতদিনও বাস্তবায়ন করেনি, এত সময় ফেলে রাখতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন এবিষয়ে কোন কিছুই বলা ঠিক হবে না।
তবে আদেশ পাওয়ার পর দ্রুত বাস্তবায়ন করা কলেজ কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব। আগামিকাল অফিসে গিয়ে ফাইলপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#