রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েকদিনের তীব্র রোদের তাপমাত্রায় পুড়ছে জনজীবন।
গরমে অস্বস্তি ও দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এতে বেশি করে কষ্টে পড়েছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ গুলো। হাসপাতালেও বেড়েছে তাপমাত্রাজনিত রোগীর সংখ্যা।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতে ও মাঠে কাজ করা মানুষ গুলো প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে ও একটু পর পর ছায়ায় পানি পান করছে। গরমের কারণে একটু স্বস্তির জন্য শিশু কিশোরদের পুকুরে গোসল করতে ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ছাতা নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়।
এই রোদে ঘর থেকে তেমন মানুষ বেড় না হওয়ায় জেলার ব্যস্ততম সড়ক গুলোতে কম যান চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া প্রচন্ড রোদের প্রভাব পড়েছে সবজির মাঠ গুলোতে। রোদে মাঠের কুমড়া গাছ গুলো ঝিমরে গিয়ে মরে যাচ্ছে।
অন্যদিকে সড়কে চলাচলকারী যান গুলো এই তাপমাত্রায় ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান চালকরা।
ঠাকুরগাঁও পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের রান ওয়েতে ভুট্টা শুকানো কাজ করছিলেন সরিতুল্লাহ নামে একজন শ্রমিক। তিনি ভোরের ডাককে বলেন, ‘খালি পায়ে হাটা যাচ্ছেনা।
জুতা পরে হাটলেও জুতা সহ পা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই রোদে কাজ করতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু উপায় নাই। আমরা গরিব মানুষ কাজ না করলে সংসার চলবে কিভাবে। তাই কষ্ট হলেও এইভাবেই কাজ করতে হচ্ছে।,
রাসেল ইসলাম নামে এক ভুট্টা ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরেও আমাদের এই দিকে এতো তাপদাহ হয়নি। কিন্তু এবার গতকয়েক দিন থেকে প্রচন্ড রোদ। আজকে এতো তাপমাত্রা শরীরে লাগতেছে মনে হচ্ছে যে ৩৮-৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রা হবে। কিছুক্ষণ পর পর খালি পিপাসা লাগে।,
আনিসা নামে এক বৃদ্ধা নারী শ্রমিক বলেন, ‘ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। রোদে খালি পায়ে হাটাও যাচ্ছে না। তাই গাছের ছায়ায় বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।,
সায়ের আলী নামে এক যুবক শ্রমিক বলেন, ‘তিন চার দিন ধরে আমাদের এইদিকে প্রচন্ড রোদ ও গরমে আমাদের পরিস্থিতি খুব খারাপ। এমন রোগ কাজ করার ইচ্ছা না থাকলেও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের গরিব মানুষদের।,
নুরজামাল হোসেন নামে এক কুমড়া চাষী বলেন, ‘প্রচন্ড রোদের তাপে কুমড়ার গাছ গুলো মড়ে যাচ্ছে ও ফল গুলো পরিপক্ক না হওয়ে পাকতে শুরু করেছে।,
ঠাকুরগাঁও থেকে বাইক নিয়ে তেঁতুলিয়ার দিকে রওনা দিয়েছিলেন আনিসুর রহমান আনিস নামে এক কার্মেটিং কোম্পানির এরিয়া সেলস্ ম্যানেজার। পথিমধ্য কথা হয় তার সাথে।
তিনি বলেন, আমি অফিসের কাজে তেঁতুলিয়া যাওয়ার জন্য বাইক নিয়ে রাওনা দিয়েছি। আজকে প্রচন্ড গরমে গাড়ি চালাতে হাত-পা গুলো ঝাঁলাচ্ছে। তাই গাছের নিচে একটু থেমেছি। এই রোদে এখন গাড়ি গন্তব্যে যাবো কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
আসলে এমন তাপদাহ চলতে থাকলে জনজীবন থেমে যেতে পারে। এই গরমে মানুষদের আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই দোয়া করি আল্লাহ যেন এমন তাপদাহ থেকে আমাদের রক্ষা করে বৃষ্টি দান করেন।
লাবু নামে শহরের এক অটো বলেন, ‘তাপের কারণে অটোর কন্ট্রোলার তাড়াতাড়ি কেটে যাচ্ছে ও চাকা ঘন ঘন পাংচার হচ্ছে।রোদের জন্য প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বেড় হচ্ছে না তাই যাত্রীও কম। এতে আমাদের খুব কষ্ট হয়ে গেছে চলাচল করতে।,
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দিতে থাকি যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নিয়মিত সেচ প্রদান করার।
যদি সেচ ব্যবস্থা কৃষকরা ঠিক রাখাতে তাহলে বেশি তাপমাত্রায়েও গাছ ঝিমে বা মরে যাওয়া রোধ করা সম্ভব। তাই তিনি কৃষকদের ফসলে সঠিক ভাবে সেচ প্রদান করার পরামর্শ দেন।,
এদিকে গরমের কারণে ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায় তাপমাত্রাজনিত কারণে ছোট বড় সব বয়সের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. রকিবুল আলম (চয়ন) বলেন, ‘পশ্চিমা দেশ গুলোর সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে হাসপাতালে আমাদের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অতিরিক্ত গরমের ফলে ডিহাইড্রেশন রোগ, যেটা পানি শূন্যতা বলে। এছাড়াও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ডিহাইড্রেশন রোধে আমাদের বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
এর সাথে পানিতে স্বল্প পরিমাণ লবণে মিশিয়ে খেলে শরীরে লবণের স্বল্পতাও পুরণ হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও তেমন জরুরী কাজ না থাকলে দুপুরের খোরা রোদে ঘর থেকে শিশু ও বয়ষ্কদের বেড় না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।,
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তথ্য মতে মঙ্গলবার (০৯ মে) সর্বোচ্চ ৩৫.৯ ডিগ্রী ও সর্বোনিম্ন ২৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ে। সে তুলনায় ঠাকুরগাঁওয়ে সচরাচর ১-২ ডিগ্রী তাপমাত্রা সবসময় বেশি থাকে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ ভোরের ডাককে বলেন, ‘বঙ্গপসাগরে লঘু চাপ ঘনভূত হওয়ায় আবহাওয়া ঘূর্ণীঝড়ের দিকে এগুচ্ছে। এটি এখনো সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না তবে এটি ঘূর্ণীঝড়ের আকার হতে পারে। লঘু চাপ নিম্ন চাপে পরিনত হতে আরও দুই একদিন সময় লাগবে।
নিম্ন চাপে পরিনত না হওয়া পর্যন্ত উত্তরাঅঞ্চলে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। নিম্নচাপ হওয়ার পরবর্তী সময় আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমতে থাকবে ও বৃষ্টি পাতও হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।,