ডেস্ক নিউজ:আজ বছরের শেষ সূর্য অস্ত গেল। বাংলা পঞ্জিকায় যোগ হবে নতুন বছর ১৪৩০। বৈশাখ তথা বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে কাল বর্ণিল উৎসবে মাতবে দেশ।
শিল্পীরা বৈশাখের প্রথম প্রত্যুষে মাঙ্গলিক গান, কবিতা আর লোকজ নৃত্যের ঝংকারে তারা স্বাগত জানাবেন নতুন বঙ্গাব্দ ১৪৩০-কে।
পহেলা বৈশাখের প্রভাতী আয়োজনের সূচনা হবে রাজধানীর রমনার বটমূলে। ছায়ানটের বর্ষবরণের এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ‘দূর করো অতীতের সকল আবর্জনা, ধর নির্ভয় গান।’
ভোর সোয়া ৬টায় সারেঙ্গীতে রাগ আহীর ভৈরব পরিবেশনায় শুরু হবে প্রভাতী আয়োজন। একক, সম্মেলক গান, আবৃত্তি ও কথন পর্বের শেষে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন আবাহনী বক্তব্য দেবেন।
এটি চলবে সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত। জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে রমনার অশ্বথমূলের এই আয়োজন।
মঙ্গল শোভাযাত্রার পর্ব শুরু হবে সকাল ৯টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হবে এটি। এ বছর এর প্রতিপাদ্য ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। বিশ্বজুড়ে যে হিংসা, হানাহানি, যুদ্ধ চলছে, তা থেকে পরিত্রাণ ও শান্তির প্রত্যাশা থাকবে এতে।
চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে ফের চারুকলায় ফিরবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রায় ছয়টি মোটিফ থাকবে। এগুলো হচ্ছে ভেড়া, হাতি, নীল গাই, টেপা পুতুল, বাঘ ও ময়ূর। এদের মধ্যে নতুন সংযোজন হচ্ছে নীলগাই।
শোভাযাত্রায় ঢাকার রাজপথে নামবে নীলগাই। বিশাল আকারের সেই নীলগাইয়ের সঙ্গে থাকবে পেখম মেলা নীল ময়ূর। থাকবে বাঘ আর হাতিও। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীগুলোকে এবার প্রধান চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হবে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ গান’ পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু করতে হবে।
শুক্রবার সকালে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে শাহবাগের পুরনো শিশু পার্ক চত্বরে গান, কবিতায় বরণ করে নেওয়া হবে নববর্ষকে।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় পহেলা বৈশাখের আয়োজন শুরু হবে সকাল ১০টায়।
উত্তরা বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের আয়োজনে রবীন্দ্র সরণির বঙ্গবন্ধু মঞ্চের আয়োজন শুরু হবে সকাল ৭টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নববর্ষ মেলার আয়োজন করা হবে। সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ফাউণ্ডেশন প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। সরকারিভাবে সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী শোভাযাত্রা আয়োজন করা হবে। রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।
শিশু একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আলোচনা সভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।
সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।
দেশের সব জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিনা টিকেটে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে জাদুঘরগুলো বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। অভিজাত হোটেল ও ক্লাবগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পহেলা বৈশাখ ঘিরে কোনো নাশকতার হুমকি নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা সতর্ক রয়েছে।