আন্তর্জাতিক ডেস্ক:মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে সেনা বাহিনীর নির্যাতন। এই নির্যাতনের টার্গেট সেখানকার রোহি ঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী।
সেনাবাহিনীর সন্দেহ রোহিঙ্গারাই আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে এই সেনা অভিযানে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে আরাকান আর্মির সূত্র বলেছে নিহতের এই সংখ্যা ৭৭ এর ওপরে।
২০০-এরও বেশি বাড়িঘর ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজধানী সিত্তয়ের বাইরে অবস্থিত ব্যায়াই ফিউ গ্রামে এ তাণ্ডব চালিয়েছে মিয়ানমারে সেনা শাসকের সৈনিকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সূত্র উদ্ধৃত করে এ সংবাদ জানায়, দ্য ইরাবতী, বিবিসি এবং রয়টার্স।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানান, গ্রামটিতে আড়াই দিন ত্রাসের মুখে ছিল মানুষজন। লোকজনকে চোখ বেঁধে মারধর করেছে সেনারা।
গায়ে গরম পেট্রল ঢেলেছে এবং গ্রামের বেশ কয়েকজনকে মূত্র পান করতে বাধ্য করেছে।
আরাকান আর্মির সমর্থকদের খুঁজতে গ্রামটিতে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে লড়াকু বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে এএ। সাত দিন ধরে চল ছে এই অভিযান।
১৫ থেকে ৭০ বছর বয়সি ৫১ জন বেসামরিক নাগরিককে সহিংস নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধি ত্বকারী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এক বিবৃতি তে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে আরাকান আর্মি বলছে, নিহতের সংখ্যা ৭০ জনের বেশি বলে ধারণা প্রকাশ করেছেমিয়ানমার জান্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘তারা (সেনা) পুরুষদের জিজ্ঞা সা করছিল যে, আরাকান আর্মির সদস্যরা গ্রামে আছে কি না।
লোকজন প্রশ্নের উত্তরে যদি বলেছে যে, তারা জানে না বা আরা কান আর্মির সদস্যরা গ্রামে আছে বা নেই-ে তারা যে উত্তরই দিয়ে ছে তাতেই সেনারা তাদের মারধর করেছে।’
মাত্র ছয় মাসেই রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা দখল করে ছে আরাকান আর্মি। তারা সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ছিল। গত বছর সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এএ। দেশের অন্যান্য অংশে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগ দেয় তারা।
এভাবে একজোট হয়ে তারা হামলা চালাচ্ছে ২০২১ সালে অভ্যুত্থা নের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। এতে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে জান্তা বাহিনী।
রাখাইনের ওই নারী বিবিসিকে বলেন, ‘আমার স্বামীকে জোর করে একটি সাঁজোয়া যানে তোলা হয়। আমি নিজের চোখে সেটি দেখেছি।
আমার সন্তানকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। আমি জানি না, সে এখন কোথায় আছে। আমি জানি না, আমার, স্বামী-সন্তান বেঁচে আছে কি না।’
রাখাইনে এই হত্যা-নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বিবিসি তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
তারা বিবিসিকে বলেছেন, গ্রামটিতে এক হাজারের কিছু বেশি পরিবারের বাস। তাদের সবাইকে দুদিন খোলা আকা শের নিচে রোদের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়।
গরমে পিপাসার্ত লোকজন পানি পান করতে চাইলে সেনারা তাদের পানির বোতলে করে মূত্র পান করিয়েছে। চোখ বেঁধে কয়েকজনকে সাঁজোয়া যানে করে নিয়েও যাওয়া হয়।
এর মধ্যে অনেকেই এখনো ফিরেননি। গত বুধবার শতা ধিক সেনা রাখাইনের রাজধানী সিত্তয়ের বাইরে অবস্থিত ব্যায়াই ফিউ গ্রামে অভিযান চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।