মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ নওগাঁর রাণীনগরে ব্যক্তিমালিকানা গভীর নলক’পের ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার কারণে সেচ কাজ চরম ভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী গভীর নলকক’পের মালিক।
অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যাায়, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের মঙ্গলপাড়া গ্রামে ১৯৭৩সালে সমবায় ভিত্তিক গভীর নলক’প প্রদান করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তিতে ১৯৯০সালে সরকারের জারি করা নোটিশের মাধ্যমে নলকক’পটি ব্যক্তি মালিকানায় প্রদান করা হয়।
পরবর্তিতে সরকারের নিদের্শনা অনুযায়ী স্থানীয় কৃষকসহ সকল বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজুলেশুনের মাধ্যমে নলকক’প নং সি-২০৬, দাগ নং ১১২৮, জেএল নং ২০৫ নলকক’পটি মঙ্গলপাড়া গ্রামের মৃত আলহাজ্ব আব্দুল করিমের ছেলে আব্দুল কাদের প্রাং ও আব্দুল মান্নান প্রাং ক্রয় করে নিয়ে ওই এলাকার প্রায় ৫শত বিঘা জমিতে পানি সেচ দিয়ে আসছে।
সম্প্রতি পূর্ব শুত্রুতার জের ধরে একই গ্রামের মৃত আবুল হাসান মন্ডলের ছেলে মঞ্জুর রহমান ও তার ছেলে মেহেদী হাসান পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সেচ প্রকল্পের ক্ষতি করার জন্য এবং সেচ প্রকল্পটি দখল করে নেয়ার চেস্টা চালিয়ে আসছে। তারা জোরপূর্বক অবৈধভাবে সেচ প্রকল্পের মধ্যে মটর বসিয়ে জমিতে সেচ প্রদান করছে।
এমতাবস্থায় গত সোমবার (২৪এপ্রিল) ভোররাতের দিকে চলাচলের রাস্তা বের করার অজুহাতে নলক’পের প্লাস্টিকের ঘর ভাংচুর করে। এতে করে নলক’পটি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় নলক’পের মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে মাঝে মধ্যে এখনোও পানি সেচ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে চরম ভাবে নিরাপত্তাহীনতায় থাকায় নলক’পটির সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে ওই এলাকার ধান চাষের কার্যক্রম বর্তমানে চরম ভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষকরা।
ভুক্তভোগী নলক’পের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন নলক’পটি স্থাপনের সময় ওই এলাকায় জনবসতি ছিলো না। সবার সর্বসম্মতিক্রমেই কিন্তু সেই সময় ওই স্থানে নলক’পটি স্থাপন করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে অপরিকল্পিত ভাবে আশেপাশে বসতি গড়ে তোলার কারণে দুইশতক জমির উপর স্থাপন করা নলক’পের ঘরের আশেপাশে জায়গাগুলো দখল করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
নলকক’পের পাশ দিয়ে একটি ভ্যান গাড়ি চলাচলের রাস্তা রয়েছে কিন্তু ভ্যানের চেয়ে বড় গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু মঞ্জুর হোসেন বর্তমানে ওই রাস্তা দিয়ে বড়গাড়ি চলাচলের জন্য নলক’পের ঘর ভেঙ্গে জায়গা চায়।
এছাড়া নলক’পটি অবৈধ ভাবে দখল করার জন্য মঞ্জুর হোসেনসহ তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন যাবত পায়তারা চালিয়ে আসছে। কিন্তু দখল করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র করে আসছে। আমি এই সমস্যার একটি সুষ্ঠ, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই যেন আগামীতে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আর কোন বাধা কিংবা ষড়যন্ত্রের শিকার হতে না হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুর রহমান বলেন ধান কাটা-মাড়াই মৌসুমে একটি মাড়াই যন্ত্র প্রবেশের জন্য নলক’পের ঘরের এক পাশের একটি দেয়ালের সামান্য অংশ বেধে যাওয়ার কারণে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সেই অংশটুকু ভেঙ্গে ইট দিয়ে ঘরটি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য এবং পানি চলাচলের অরক্ষিত ড্রেনের উপর স্লাব দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবত নলক’পের মালিক মান্নান ও তার ভাইকে অনুরোধ করে আসছি কিন্তু কোন কাজই হচ্ছে না।
বর্তমানে ইরি-বোরো মৌসুমে যদি আমি আমার আঙ্গিনায় কৃষি যন্ত্র না নিয়ে আসতে পারি তাহলে কিভাবে আমি ধান মাড়াই করবো। তাই আমরা নলক’পের ঘরের ওই বেধে যাওয়া প্লাস্টিকের ওয়ালটি খুলে দিয়ে ওই স্থানটি আবার টিনসহ অন্যান্য উপকরন দিয়ে নলক’পের ঘরটি ঢেকে রেখেছি। নলক’পের ঘরে কোন প্রকারের ভাংচুর করা হয়নি। আমরা চাই গভীর নলক’পের কারণে আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা বছরের পর বছর যেসব সমস্যা নিয়ে বসবাস করে আসছি সেগুলো আইনগত ভাবে সমাধান হোক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন মুঠোফোনে জানান, দীর্ঘদিন বলার পরও যখন নলক’পের মালিকরা সমস্যা সমাধান করছে না তখন ধান মাড়াই করার মেশিনটি মঞ্জুর রহমানের আঙ্গিনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নলক’পের ঘরের প্লাস্টিকের একটি দেয়াল খুলে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তবে ওই সময় নলক’পের মালিক পক্ষের কেউ ওই স্থানে উপস্থিত ছিলো না।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন এই বিষয়ে এককটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন সাপেক্ষে দ্রুত এককটি শান্তিপূর্ন সমাধান করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।