আন্তর্জাতিক ডেস্ক:যুক্তরাজ্যের রাজা হিসেবে শপথ নিয়েছেন তৃতীয় চার্লস। যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের ৪০তম সিংহাসন আরোহী হিসেবে শনিবার (৬ মে) তিনি শপথগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে রাজ্যাভিষেক হয়েছে চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলারও।
ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি রাজা চার্লসের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, রাজ্যাভিষেক শপথের আইনি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
রাজাকে আর্চবিশপ বলেন, নতুন রাজা যেন তাঁর শাসনকালে আইনের শাসন ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের মর্যাদা সমুন্নত রাখেন।
রাজা তৃতীয় চার্লস পবিত্র গসপেলে হাত রেখে শপথ নেন এবং আইনের শাসন ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেন।
এ ছাড়া একজন ‘একনিষ্ঠ প্রোটেস্ট্যান্ট’ হিসেবে দ্বিতীয় শপথও নেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
এর আগে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তাঁর স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা। বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি ঘোড়ার গাড়িতে করে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছান তাঁরা।
রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের নেতা ও তারকারা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে জড়ো হয়েছেন। প্রায় ১০০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান এবং বিশ্বের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
চার্লস ও ক্যামিলা বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে শোভাযাত্রা করে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে এসে পৌঁছানোর পরই সেখানে অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হয়। লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান, ধর্মীয় নেতা এবং কমনওয়েলথের নেতারা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে এসে তাদের আসন গ্রহণ করেন।
লন্ডনে সকালে বৃষ্টি হয়েছে, তবে তাতে রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানে মানুষের উৎসাহে কোনো ঘাটতি পড়েনি। রাজা চার্লস এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে নিয়ে শোভাযাত্রা যখন বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে যাচ্ছিল, তখন হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের এক নজর দেখার জন্য।
এদিকে রাজতন্ত্রবিরোধী একটি গোষ্ঠী লন্ডনে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ ট্রাফালগার স্কোয়ারের কাছে এই গ্রুপের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। প্রিন্স অব ওয়েলস অ্যান্ড ক্যাথেরিন এবং প্রিন্সেস অব ওয়েলসও ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবিতে পৌঁছান। ৭০ বছর পর দেশটিতে আবারও আয়োজিত হলো রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান।
অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি দুই হাজার তিনশ জন। এদের মধ্যে আছেন প্রিন্স হ্যারি, ডিউক অফ সাসেক্স। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুক্রবার একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে এসে পৌঁছান। প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী প্রকাশিত হওয়ার পর এই প্রথম তাকে তার ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে জনসমক্ষে দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, অভিষেক অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রিন্স হ্যারি আমেরিকায় ফিরে যাবেন। এই অভিষেক অনুষ্ঠানে থাকছেন না হ্যারির স্ত্রী মেগান।
রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে তার সন্তান চার্লস যুক্তরাজ্য ও আরও ১৪টি রাষ্ট্রের রাজার স্বীকৃতি পান গত সেপ্টেম্বরে। তার অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে পরের কয়েক মাস ধরে চলে ব্যাপক পরিকল্পনা। যুক্তরাজ্যে সবশেষ রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে, যখন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাথায় মুকুট পরানো হয়েছিল।
অভিষেকের আগ মুহূর্তে রাজাকে বেশ শান্তই মনে হয়েছে। কড়া নিরাপত্তাসহ ওয়েলসের প্রিন্স ও প্রিন্সেসকে নিয়ে মলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে তাকে। অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য কয়েক মাস ধরে ব্যাপক পরিকল্পনা করা হয়। ৪০তম এই অভিষেক ১০৬৬ সালের পর আবারো ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অভিষেক অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালন করেন ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি। অতিথি তালিকায় মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন থেকে শুরু করে আছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও উপস্থাপক জুটি অ্যান্ট এবং ডেক।
আগের যে কোনো অভিষেক অনুষ্ঠানের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় বিশ্বাসের উপস্থিতি রয়েছে। ইহুদী, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং শিখ প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাইবেল থেকে পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। যদিও তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় ওয়েলস, স্কটিশ ও আইরিশ ভাষায়।
এই অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রথমবার কোনো নারী বিশপ অংশ নিলেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় ব্রিটিশ সময় আনুমানিক দুপুর ১টায়। এরপর রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা স্বর্ণ খচিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাকিংহাম প্যালেসে ফিরে যান। প্রায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার (১ মাইল ) পথ পাড়ি দেওয়ার সময় ছিলো ৪ হাজার সৈন্য এবং ১৯টি ব্যান্ডদল।