মফিজুল ইসলাম শৈলকুপা(ঝিনাইদহ)
শৈলকুপার সাফখোলা গ্রামে ২বছর ধরে চলেছে নারী সহ শতাধিক পরিবার-পরিজনদের ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ।

সারাদিন সংসারের ঘানি টানতে কাজকর্ম সেরে গ্রামের মানুষ যখন রাতে বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে তখন গোপনে ধারণ করা হচ্ছে সেসবের ব্যক্তিগত ভিডিও। বিশেষ করে নারীদের ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। গত ২ বছর ধরে এমন সাইবার অপরাধ চলে আসছে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার প্রত্যন্তপল্লী সাপখোলা গ্রামে এমন ঘটনায় রাতের ঘুম হারাম গ্রামবাসীর।

রাত জেগে গ্রামবাসী দিচ্ছে পাহারা, তবে এসবের মাঝেই অপরাধীচক্র ঘটিয়ে চলেছে এমনকান্ড । গ্রামের একজন কৃষক গভীররাতে ভিডিও ধারনের সময় জানালার ভেতর থেকে একটি মোবাইল কেঁড়ে নিতে সক্ষম হয়।

তাতে দেড় শতাধিক ভিডিও-ছবি, যার সবই স্বামী-স্ত্রী আর নারীদের ব্যক্তিগত । এমন ঘটনা জানাজানির পর পুলিশ আর সাইবার ক্রাইম টিম নেমেছে অভিযানে তবে আটক করতে পারেনি কাউকে, হয়নি থানায়
মামলা।

এব্যাপারে সাপখোলা গ্রামের যুবক রবিউল ইসলাম জানান সে চাকুরী করেন একটি বে-সরকারী কোম্পানীতে, থাকেন বাহিরে ।

তবে তার স্ত্রী প্রায়শ^ই গভীর রাতে ঘরের পাশে মানুষের
আনাগোনা আর উপস্থিতি টের পান। তার ঘরে পাটখড়ি দিয়ে খোঁচা দেয়া হয়। এমন.পরিস্থিতিতে চাকুরী ছেড়ে রবিউল এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন ।

একই গ্রামের কৃষক ফেরদৌস জানান হঠাৎ তার ঘরের ভেতরে জানালা দিয়ে টর্চের আলোর উপস্থিতি টের পান। কৌশলে জানালার কাছে দাড়িয়ে দেখতে পান একটি মোবাইল ঢুকিয়ে ভিডিও করছে এক যুবক, তিনি থাবা দিয়ে মোবাইল কেড়ে নেন তবে অপরাধী পালিয়ে যায়। ঈদের দিন রাতে এমন ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি।

ইউপি সদস্য টিটো শিকদার জানান, অপরাধী চক্রের একটি মোবাইল তারা পেয়ে সামাজিক ভাবে বসে জানার চেষ্টা করেন সেটি কার, পরে ফোনটি পুলিশ কে দিয়েছেন।

সেই মোবাইলে গ্রামের বিভিন্ন পরিবার ও নারীদের দেড় শতাধিক ভিডিও-ছবি রয়েছে, যার সবই ব্যক্তিগত। সেই ভিডিও ধারনের সময়কাল দেড় বছরের বেশী । এমন পরিস্থিতিতে গ্রামে রাতে পাহারা বসানো ওহয়েছে, এসবের মাঝেও ঘটে চলেছে এমন গুরুত্বর সাইবার অপরাধ।

এদিকে গ্রামবাসী মোবাইল ফোন উদ্ধার করে তার সিম সনাক্ত করতে পারে, সিমটি সাপখোলা গ্রামের এক তরুনী ব্যবহার করত। সেই তরুণী অভিযোগ করছে সিমটি তার আত্মীয় আজমুলের
ছেলে পার্থ ওরফে তুরাগ জোর করে কেঁড়ে নেই ২বছর আগে। ব্লাকমেইল সহ ছবি তুলে হুমকি দিয়ে রাখে সিমের কথা ফাঁস করলে ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে এবং হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে।

এ ব্যাপারে তুরাগ ও তার পরিবারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।

র্বতমানে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামজুড়ে। রাতে নিজ বাড়ি-ঘরে নিরাপত্তার সাথে ঘুমোতে না পারায় ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্ক তাদের মধ্যে। মান-সম্মান নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য আবেদন গ্রামবাসীর। দ্রুত এরা গ্রেফতার না হলে সমাজে বাড়বে বিশৃঙ্খলা আর সামাজিক অস্থিরতা।

এব্যপারে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, নারীদের ব্যক্তিগত ভিডিও সহ নানা ভিডিও ধারণ হয়েছে। তবে এমন ঘটনায় থানায় এখনো মামলা হয়নি।

তারা ঘটনা জানতে পেরে, গ্রামবাসি যে মোবাইল পেয়েছিল তা জব্দ করেছে। সাপখোলা গ্রামের পার্থ ওরফে তুরাগ নামের একজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে-তদন্ত শুরু হয়েছে, আর পৃথকভাবে সাইবার ক্রাইমের টিম কাজ শুরু করেছে তবে এর সাথে যেই জড়িত হোক তাকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *