মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সরকারি রাস্তাকে ঘেরে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করায় উপজেলার শতাধিক প্রধান ও গ্রামীণ সড়ক ধসে পড়েছে।
এতে করে নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব সড়ক দিয়ে পথচারী ও ছোট-বড় যানবাহন চলা চলে প্রতিবন্ধ কতা দেখা দিয়েছে। ফলে পানিতে যাচ্ছে সরকারে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। চলাচলে বাড়ছে দুর্ভোগ।
আশির দশকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপজেলার বিভিন্ন খালবিল, নদীর অববাহিকা দখল করে মাছ চাষ শুরু করেন। শুরু থেকেই ঘের মালিকরা গ্রামীণ প্রধান সড়কগুলো ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন।
এতে সড়কগুলোতে ধস নামে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ শতাধিক পাকা ও ইটের সোলিংয়ো সড়ক মাছের ঘেরের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে।
এর মধ্যে কাশিমাড়ি-ঘোলা খেয়াঘাট সড়কসহ সোয়ালিয়া-নূরনগর সড়ক, ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়-ঝাপালি সড়ক, নকিপুর ভুলোর মোড়-নওয়াবেঁকী সড়ক, কলবাড়ি-নীলডুমুর সড় ক,নাওয়াবেকী-কলবাড়ি সড়ক, গোপালপুর সোয়ালিয়া সড়ক, মানিকখালি-রমজাননগর ফুটবল মাঠ, পদদ্ম পুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা-চৌদ্দরশি কেয়ার রাস্তা সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পিচের পাকা সড়ক ও ইটের সোলিংয়ের সড়ক দুই পাশ থেকে ধসে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয়রা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে ঘের বা পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন চাষীরা। এসব চাষী তাদের ঘের বা পুকু রের ১টি বা ২টি পাড় হিসে বে সরকারি রাস্তা ব্যবহার করছেন। বাতাসে ঘেরের পানিতে ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ঢেউ আছড়ে পড়ছে সড়কের ধারে।
এতেই মাছের ঘেরে ভেঙে পড়ছে সড়ক। একই সাথে ঘেরের পানিতে নিমজ্জিত থাকায় সড়কগুলোর স্থায়িত্ব দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের আব্দুর রা জ্জাক বলেন, মাছের ঘেরওয়ালাদের জন্য রাস্তা টিকছে না। মাছের ঘেরের পানির ঢেউয়ে রাস্তার মাটি, পিচ (বিটুমিন) পর্যন্ত ভেঙে পড়ছে।
দুই পাশ থেকে ভেঙ্গে রাস্তার যে অবস্থা হয়েছে তাতে আমা দের এলাকায় কোন যানবহন আসতে চায় না।
যাদবপুর এলাকার কামরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতির তো য়াক্কা না করে সড়ককে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে বছরের পর বছর মাছ চাষ করে আসছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী। এতে সরকারি অর্থে নির্মিত সড়কের ক্ষতি হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, সরকারি সড়ক মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করায় রাস্তা ধসে পড়ার বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়েছে।
কিন্তু এবিষয়ে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন জানান, ঘের মালিকরা সড়ক অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে মাছ চাষ করার ফলে সড়কের ঢাল ও সোল্ডারসহ পিচের রাস্তা ভেঙে গেছে।
বিধি অনুযায়ী সড়ক থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে পৃথক বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষের জন্য পত্র দেওয়া হলেও ঘের মালিকরা তা অমান্য করে সড়ককেই বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে সড়কের ক্ষতি করে চলেছেন।
এবিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, সামনের শুষ্ক মৌসুমে রাস্তা ছেড়ে ঘেরের জন্য পৃথক বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঘের মালিকদের ইতিমধ্যে নির্দেশনা দে ওয়া হয়েছে।
এছাড়াও যেসব ঘেরের রেজিস্ট্রেশন করা হয় সে সকল ঘের মালি কদেরকে বেড়িবাঁধ নির্মাণে আউট ড্রেন রাখার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় ঘেরের রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে উন্নয়ন কর্মী লুৎফর রহমান বলেন, আউট ড্রেন না রেখে গ্রামীণ সড়ককে ঘেরের বেড়ি হিসেবে ব্যবহার করায় তা দ্রুত ভেঙে চলে যাচ্ছে ঘেরের মধ্যে।
এতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড যেমন টেকসই হচ্ছে না, তেমনি কোটি কোটি টাকা পানিতে চলে যাচ্ছে। আউট ড্রেন না রাখায় পানি নিষ্কাশনের পথ থাকছে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে গ্রামের পর গ্রাম।
এতেও রাস্তাঘাট ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। মানুষের কাঁচা বাড়িঘর নষ্ট হচ্ছে। ঘেরের লবণাক্ত পানি চুইয়ে আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য। বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের।
তাই উপকূলীয় মৎস্য ঘের অধ্যুষিত জেলাগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন টেকসই করতে ঘেরের আউট ড্রেন নির্মাণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
যা একই সঙ্গে গ্রামীণ সড়কের সুরক্ষা, পানি নিষ্কা শন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সবণ পানির আগ্রাসন থেকে কৃষিজমি রক্ষা ও রাস্তার খোয়ানি রোধসহ নানামুখী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
One thought on “শ্যামনগর সড়কে বেড়িবাঁধ:,পানিতে যাচ্ছে কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্”
  1. শ্যামনগর সড়কে বেড়িবাঁধ:,পানিতে যাচ্ছে কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *