মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা ।
সাতক্ষীরায় কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রবৃষ্টিতে এক শিশুসহ ৫জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসময় গুরুতর আহত হয় আরো ২জন। এদের মধ্যে বজ্রপাতে দু’জন, মাথায় গাছের ডাল পড়ে দু’জন এবং নারিকেল পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রবৃষ্টি চলকালে এসব ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হলে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পাঁচরকি গ্রামের কামরুল ইসলাম (৩৬) বাড়ির পাশে বিলে ধান তুলতে যান। এসময় হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

অপরদিকে সদর উপজেলা আগরদাড়ি ইউনিয়নের বিহারীনগর গ্রামের মৃত আহাদ বক্সের ছেলে আব্দুল্লাহ মোল্যা (৩৪) বজ্রবৃষ্টি চলাকালে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির উঠানে আসা মাত্রই হঠাৎ নারকেলগাছে বজ্রপাত হলে নিচে থাকা আব্দুল্লাহ গুরুতর আহত হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান।

এদিকে বজ্রসহ বৃষ্টিচলাকালে বিকালে সাতক্ষীরা শহর উপকণ্ঠের মাগুরা এলাকায় গাছ থেকে মাথায় নারকেল পড়ে জাহানারা খাতুন নামের এক নারী মারা যান। তিনি লাবসা ইউনিযনের মাগুরা দক্ষিনপাড়া গ্রামের মরহুম সফের আলী ওরফে কচি কসাইয়ের স্ত্রী। এছাড়া কালিগঞ্জের রতনপুরে আমগাছের ডাল পড়ে একজন আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে খুলনায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

অপরদিকে সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া মোড় এলাকায় খাদিজা খাতুন নামে ৯বছরের এক কন্যা শিশু ঝড়ে আম কুড়াতে গিয়ে মাথায় ডাল পড়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া শহরের রসুলপুরে ঝড়ে আম কুড়াতে গিয়ে মাথায় ডাল পড়ে দুজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের একজন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে এবং অপরজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ওা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান পৃথকভাবে এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

এদিকে ঝড় আর বজ্রবৃষ্টিতে বোরো ধান আর আমের ক্ষতি হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা মাঠে ধান কেটে রেখেছিলেন। রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

বৃহস্পতিবার বিকালে সেই পাকা ধানে মই দিয়েছে কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রবৃষ্টি। একই সাথে কালবৈশাখী ঝড় তেজ দেখিয়েছে গাছে আমের উপর। ঝড়ের তান্ডবে বৃষ্টির সাথে ঝরেছে কাচা আম। ঝড় আর বৃষ্টিতে উড়ে গেছে দোকান ও কাচাঘরের চাল। এছাড়া কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ লাইনেরও ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

কলারোয়ার দলুইপুর গ্রামের আম বাগানের মালিক আহম্মাদ আলীর ছেলে আব্দুল গণি জানান, যেটুক সময় ঝড় হয়েছে, তাতে আম বাগানের ২০হাজার টাকার আম ঝরে পড়েছে। এভাবে প্রতিটি বাগানের প্রতিটি চাষীর মণ মণ আম ঝরে পড়েছে বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের আতরালীর ছেলে ধান চাষী শের আলী সরদার জানান, বাওড় সংলগ্ন ধান ও বিচালীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি বিচালী ২টাকা দরে বাজারে বিক্রয় করা হয়। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে বিচলী পানিতে ভিজে পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সাতক্ষীরা পৌরসভার রাজার বাগান এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, মাঠে ধান কেটে এখন বাড়ি আনতে পারেনি। বৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে গাছের অনেক আম ঝরে পড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের জুলফিকার আলী রিপন বলেন, জেলায় বছরের প্রথম কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে। ঘণ্টায় ২৫/৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে।

দাবদাহের পর ওই বৃষ্টি জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। রাত ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এই ঝড় বৃষ্টিতে কৃষকের খুববেশি ক্ষতি হয়নি।

এই বৃষ্টি পাটসহ রবি মৌসুমের কিছু ফসলের জন্য ভালো হয়েছে। ঝড়ে কিছু আম ঝরে পড়লেও আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় কোন প্রভাব পড়বে না। আশা করছি, আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার দেড়গুণ আম উৎপাদন হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *