সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরায় পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী নামের এক গৃহবধূ ও তার প্রেমিককে পিটিয়ে ও শরীরে গরম তেল ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় থানা য় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার গৃহ বধূর বাবা জেলার সাতক্ষীরার আশা শুনি উপজেলার বুধহা টা গ্রামের মোঃ নওশের আলী সরদা রের ছেলে মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে শনিবার রাতে সদর থানায় এই মামলা দা য়ের করেন।
এঘটনায় পুলিশ নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বা মী, শশুর ও ননদসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেফÍারকৃতরা হলো, সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান (ঋ ষিপাড়া) এলাকার মোঃ আব্দুল বারীর ছেলে নির্যাতনের শি কার গৃহবধূর স্বামী মোঃ নয়ন হাসান রাব্বি (২৪), শশুর মৃত নলিম শেখ এর ছেলে মোঃ আব্দুল বারী (৫২) ও ননদ আশা শুনি উপজেলার চেউটিয়া গ্রামের মোঃ আজমল হোসাইনের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা সুমি (২৭)।
এামলার বাদী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমার মেয়ে রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী আশাশুনি গুনারাকাঠি মাদ্রাসায় আলিম ২য় বর্ষে লেখাপড়া করে।
একই মাদ্রসায় লেখাপড়ার সুবাদে কচুয়া গ্রামের আবু হানিফ সরদারের ছেলে মোঃ হাবি বুলাহ আমার মেয়ের বন্ধু।
সেই হিসেবে তাদের মধ্যে মোবা ইলে কথা হত। শনিবার বেলা সোয়া ১০ টদিকে আমার মে য়ের বন্ধু আব্দুল্লাহ লেখাপড়ার বিষয়ে মেয়ের সাথে কথা বলতে জামাইয়ের বাড়ীতে যায়।
পরে সাথীর শশুর বাড়ির লোকজন তাদের দু’জনকে আটক করে মধ্যযুগীয় কায়দার নির্যাতন চালায়। এসময় মেয়ের সর্ব ঙ্গে গরম তেল ঢেলে দি য়ে পুড়িয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তিনি এঘটনার সুষ্ঠ বি চার দাবি করেন।
মামালার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সর কার জানান, গৃহবধূ রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী সহ তার বন্ধু মাদ্রসা ছাত্র আব্দুল্লাহকে নির্যাতনে ঘটনায় শনিবার রাতে সাতক্ষীরা সদর থানায় ৬জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাবা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে রাতে এই মামলা দায়ের করেন।
এঘটনায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী মোঃ নয়নহাসান রাব্বি, শশুর মোঃ আব্দুল বারী ও ননদ নাসরিন সুলতানা সুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান,রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী ও হাবিবুল্লাহকে মধ্যযুগীয় কায়দায়নির্যাতনের অভিযোগে রাব্বি ও তার বাবা আব্দুল বারী এবং রাব্বীর বোনসুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গতঃ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের মোঃ সাজ্জাদহোসেনের মেয়ে স্থানীয় গুনাকারকাটি দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথীর সাথে প্রায় তিন বছর আগে সাতক্ষীরা শহরের রাজারাবাগান (ঋষিপাড়া) এরাকার আব্দুল বারীর ছেলে নয়ন হাসান রাব্বিরবিয়ে হয়।
দুই মাস আগে একটি মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা ও তার সম্পর্কে অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় রাব্বি তার স্ত্রী রুাইয়া ইয়াসমিন সাথীকে মারপিট করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
কিছুদিন পর রাবি তাদের বাড়িতে যেয়ে ক্ষমা চেয়ে সাথীকে নিয়ে আসতে চায়। কিন্তু সাথী যেতে রাজী না হওয়ায় রাব্বি মাঝে মাঝে তাদের বাড়িতে যেত। একপর্যায়ে ১০দিন আগে রাব্বি তার স্ত্রী সাথীকে নিয়ে বাড়িতে আসে। পূর্বের ঘটনার জের ধরে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাব্বি, তার বাবা আব্দুল বারিসহ কয়েকজন বারান্দায় বসে থাক সাথী ও তার সাথে দেখা করতে যাওয়া তার (সাথী) বন্ধু একই মাদ্রাসার ছাত্র মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ (২০) কে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া ও দুই চোখের ভ্রুর চুল কেটে দেয়। পরে তার সর্বঙ্গে গরম তেল ঢেলে দিয়ে পুড়ি য়ে হত্যার চেষ্টা করে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল তিনটাপর্যন্ত সাথী ও হাবিবুল্লাহর উপর এ নির্যাতন চালানো হয়।
হাবিবুল্লাহ আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের আব্দুল হানি ফের ছেলে। হাবিবুল্লার মাথায় ও পায়ে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়।
এঘটনার খবর পেয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নির্যা তনের শিকার গৃহবধূ সাথী ও হাবিবুল্লাহকে উদ্ধার করে সাত ক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
অবস্থার অবনতি হওয়ায় সাথীকে শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার রাতেই দগ্ধ গৃহবধূ সাথীকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আহত আব্দুল্লাহ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।