শাহীন সোহেল চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি!!  যশোরের চৌগাছা উপজেলা ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা সীমন্তবর্তী সাত গ্রামের মানুষ চৌগাছায় থাকতে চাই। ২৯ মার্চ (বুধবার) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চৌগাছা উপজেলা পরিষদের হল রুমে সাত গ্রামের মানুষের মুখে গণশুনানি গ্রহণ করেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আব্দুর রশিদ। শুনানিতে উপস্থিত সাত গ্রামের গণমানুষের মুখের ভাষা ছিল, আমরা ফিরে পেতে চাই আপন ঠিকানা চৌগাছা।
এ সাতটি গ্রাম নিয়ে দুই উপজেলার মধ্যে রশি টানাটানি চলছে চার দশক ধরে। এতে নানা ভাবে ভোগন্তির পোহাতে হয় (বিশ্বনাথপুর, শ্যামনগর, কমলাপুর, আলিশা, যদুনাথপুর, রাড়িপাড়া ও পাঁচবাড়িয়া) এই সাতটি মৌজায় বসবাসকারি প্রায় ২০ হাজার মানুষের। সর্বশেষ এই সাতটি মৌজার মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকার বৈঠকে যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত করার সিন্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে সাত গ্রামের মানুষ উচ্চ আদালতে আফিল করেন। এই আফিলের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রানালয় গণশুনারি জন্য বিভাগীয় কমিশনার খুলনা কে দায়িত্ব দেন।
গণশুনানির সময় উপস্থিত চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউরুফা সুলতানা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানঅধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহমেদ, নির্বাচন কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেরা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুজ্জুমান, সুকপুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান, সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিক, নারাণয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহামান, স্বরুপদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল কদরসহ সাতগ্রামের মানুষ, সংবাদ কর্মী ও উপজেলার সকল কর্মকর্তাগণ।
শুণানির সময় বিভাগীয় কমিশনার সাতগ্রামের প্রত্যেকটি নাগরিকের বক্তব্য লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেন। শুনানি শেষে বিষয়টি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে সকলকে প্রতিশ্রুতি দেন।
উল্লেখ্য গত ২০০৮ সালের ১৭ই জানুয়ারী এ সংক্রান্ত একটি রীট বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি ফারাহা মাহবুব এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন।
জানা যায়, দুই উপজেলার মধ্যবর্তি এই সাতটি গ্রাম নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে রশি টানাটানি চলে আসছিল। সাতটি গ্রাম মহেশপুর উপজেলার পক্ষে রাখতে দায়ের করা একটি রিট হাইকোট খারিজ করে দেওয়ায় গ্রামগুলো দ্বৈত শাসনের অবসান হয়।
রীটের নথি সূত্রে জানা যায়, সাত গ্রামের গণমানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকার-৫৫ তম বৈঠকের সিন্ধান্ত মোতাবেক ১৯৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলা থেকে বিযুক্ত করে গ্রামগুলো যশোরের চৌগাছা উপজেলায় যুক্ত করা হয়। ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ১৯৯১ সালে সাধারণ নির্বাচনে চৌগাছার অধিবাসী হয়ে গ্রামগুলোর মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। পরে ১৯৯৪ সালে সাত গ্রামের একাংশের জনগনের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিকার-৮১ তম বৈঠকে পূর্বের সিন্ধান্ত বাতিল করা হয়। এবং ৪ অক্টোবর ১৯৯৪ তারিখে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৭টি মৌজাকে পুনরায় মহেশপুর উপজেলায় যোগ হয়।বিষয়টি আলোচনায় আসলে তৎকালীন বিদ্যুৎ জালানী ও খনিজ স¤পদ প্রতিমন্ত্রি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কর্তৃক মন্ত্রী পরিষদের সচিবের বরাবর প্রেরিত একটি উপআনুষ্ঠানিক পত্রে পুনরায় সাত গ্রামকে চৌগাছা উপজেলায় সংযুক্তির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান।
১৯৯৪ সালের সীমানা কমিশনের রিপোর্টে সাতটি মৌজাকে পূনরায় যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় অর্ন্তভুক্তি করার সুপারিশ করেন। সুপারিশ পত্রে বলা হয় নিকার ৮১তম বৈঠকে যথাযথ বিবেচনা না করেই ৫৫ তম বৈঠকের (৭টি মৌজা চৌগাছার সাথে সংযুক্তকরন) সিন্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা সদরের দুরত্ব, অর্থ ও সামাজিক বিষয় বিবেচনা করে ৭টি মৌজা যশোরের চৌগাছা উপজেলার সাথে যুক্ত করা যায়।
সুপারিশের ভিত্তিতে মহেশপুর ও চৌগাছা উপজেলার থানা পুর্নগঠনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও ভুমি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিকারের এই সিন্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সর্দার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এম এ আজিজ ও বিচারপতি হুদার একটি বেঞ্চ রুল জারি করেন। যার কারণে সাতটি গ্রাম চৌগাছার অর্ন্তভুক্তির বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। ফলে ৭টি গ্রামের প্রশাসনিক কার্যক্রম দুই উপজেলার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। প্রশাসনিক দায়িত্ব মহেশপুর উপজেলায় এবং সেচ-বিদ্যুৎ ও শিক্ষাবিষয়ে চৌগাছা উপজেলার নিয়ন্ত্রনে থাকে।
গণশুনানির সময় পাঁচবাড়িয়া গ্রামের বকুল হোসেন, মুকুল হুসাইন,রাশেদুল ইসলাম, রাড়িপাড়া গ্রামের পান্নু রহমান, ফরজান আলী, শ্যামনর গ্রামের আব্দুল মালেক, কমলাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও যদুনাথপুর গ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক তাহাজ্জেলহোসেন বলেন, আমরা ৭ গ্রামের মানুষ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজসহ চাকুরী প্রত্যাশী ছেলে মেয়দের চাকুরির আবেদনে এবং চাকুরির মৌখিক পরীক্ষায় ঠিকানা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল কাজে সাত গ্রামের মানুষের যশোর জেলার চৌগাছাতেই সুবিধা বেশি। তাই আমাদের দাবী পৃথক একটি নতুন ইউনিয়ন করে ঝিনাইদহ মহেশপুর থেকে আমাদেরকে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার অর্ন্তভূক্ত করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *