ডেস্ক নিউজ: পাঁচ সিটি করপোরেশন গাজীপুর, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী নির্বাচনের আসন্ন ভোট তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী সিটির সঙ্গে সিলেট সিটি, খুলনার সঙ্গে বরিশাল এবং এককভাবে হবে গাজীপুর সিটির ভোট। প্রথমে গাজীপুর সিটির ভোট এবং পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর নির্বাচন হবে। এ লক্ষ্যে সোমবার (৩ এপ্রিল) কমিশন সভা আহ্বান করা হয়েছে।
এ সভায় আলোচনার পর আসন্ন সিটি ভোটের তারিখ ভিন্ন রেখে একত্রে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এ সব সিটির ভোট পর্ব শেষ করবে ইসি।
কমিশন সূত্র জনিয়েছে, আসন্ন সিটি করপোরেশনগুলোয় ভোট অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। তবে গাইবান্ধা উপনির্বাচন ও রংপুর সিটির মতো এই নির্বাচনগুলোয় গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি) রাখা হবে কি না; সে সিদ্ধান্ত আসবে তফসিল ঘোষণার পর।
এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসির প্রশাসন। অন্যদিকে, সিটি এলাকাগুলোয়ও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এদিকে, সিটি নির্বাচন ছাড়াও সভার আলোচ্যসূচিতে ইভিএম ও বিবিধ সংক্রান্ত এজেন্ডা রাখা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সোমবার (৩ এপ্রিল) কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সিটি নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি এজেন্ডা রয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণা করা হবে কি না কমিশন সভায় আলোচনার পর জানা যাবে।
ইসির একজন যুগ্ম-সচিব বলেন, তিন ধাপে সিটি নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে গাজীপুর, দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহী ও সিলেট এবং তৃতীয় ধাপে বরিশাল-সিলেট। তবে, গাজীপুর ছাড়া ওই দুধাপে ভোট আগে-পরে হতে পারে।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছিলেন, কোরবানির আগেই পাঁচ সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। বলেন, কোরবানির পরে আমাদের সংসদ নির্বাচনের জন্যই মনোনিবেশ করতে হবে। সংসদ নির্বাচনের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ রয়েছে। অনেক ধরনের বিষয় আছে। গাজীপুর আগে হবে। আর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর পর্যন্ত অন্যগুলোর সময় আছে। কিন্তু আমরা অত দূর যাব না। ২৩ মে থেকে জুনের মধ্যেই ৫ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোনটা আগে-পরে হবে সেটা তফসিলে ঠিক হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ভোটের সময় নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহের দিকে। এ হিসেবে চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে ঘোষণা করা হবে তফসিল।
তাই সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটির ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এ নির্বাচনগুলোয় নিরপেক্ষতায় ঘাটতি দেখা গেলে বর্তমান কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ভোটার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অনাস্থা দেখা দিবে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন যদিও বিএনপিকে তাদের আস্তায় এনে সংলাপে বসাতে পারেনি। সর্বশেষ ২৩ মার্চ দলটিকে ফের সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি। ফলে স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচন ইস্যুগুলো ইসির জন্য ফ্যাক্টর হবে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই বলে আসছে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তারা বদ্ধপরিকর। সেভাবেই কাজ চলছে।
এ ছাড়া বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবার কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঁচ সিটি নির্বাচনেও অংশ নেবে না দলটি। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি তারা। তবে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন দুই নেতা। নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারেননি তারা। এখন দলের কর্মসূচিতে অংশ নিলেও তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি।
এদিকে, সাবেক কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদকালে ২০১৮ সালে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও গাজীপুর সিটিতে। এসব সিটিতে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তবে রাজশাহী সিটির একটি ওয়ার্ডে ইভিএমের কারিগরি ত্রুটির কারণে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। এই নির্বাচনের পর ইভিএম থেকে দূরে সরে আসতে শুরু করে তৎকালিন কমিশন।
তবে, কুমিল্লা সিটির পর গাইবান্ধা-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ও রংপুর সিটিতে ইভিএমে সাম্প্রতিককালে ভোট আয়োজনে যন্ত্রের প্রতি আস্থা বেড়েছে বর্তমান কমিশনের। এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচ সিটিতে ইভিএমে ভোট করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থার। তবে সিসি ক্যামেরা রাখার নিয়ে রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায় বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গাজীপুর ও রাজশাহী সিটির ভোট হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুন এবং প্রথম সভা বসে ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর।
এর ক্ষণ গণনা শুরু হচ্ছে ১১ মার্চ থেকে। নির্বাচন করতে হবে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। একই ভাবে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটির ভোট হয়। এ হিসেবে প্রথম সভা যথাক্রমে ১১ সেপ্টেম্বর, ১১ অক্টোবর, ৭ নভেম্বর ও ১৪ নভেম্বর। এসব সিটির ক্ষণ-গণনা শুরু হচ্ছে যথাক্রমে ১৪ মে থেকে। আর সব কয়টির মেয়াদোত্তীর্ণ হবে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ইসির দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেন, পাঁচ সিটিতেই ইভিএমে ভোট করা হবে। এতে নির্বাচনে পেশিশক্তির প্রভাব দুই-তৃতীয়াংশ কমে আসে। ব্যালট কাটাছেঁটার ঝুঁকি কমে যায়।
ভোটাররা চাইলে কেন্দ্রে পৌঁছে নিজের ভোটটি স্বাচ্ছন্দ্যে দিতে পারবেন। এর জন্য সিসিটিভি রাখলে ভালো হয়। কিন্তু খরচের বিবেচনায় এটি রাখা যাবে কি না কমিশন সভায় সিদ্ধান্তের আগে বলা সম্ভব হবে না।