মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর নওগাঁর মহাদেবপুরের রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা এ্যাডভোকেট ফেরদৌস আলম কাজল নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে প্রশাসন।

গত ২৮ মার্চ বেলা ১১টায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট আবু হাসান এর নেতৃত্বে রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করায় সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তা আবু হাসান ছাড়াও থানা পুলিশ, মাতাজিহাট ভুমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস, মহাদেবপুর ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার জিল্লুর রহমানসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের করায় চেয়ারম্যান আরিফুর রহমানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ৬ শতাংশ জমি ইউনিয়ন পরিষদের মালিকানাধীন। যা জনগনের যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত। সম্প্রতি সেই জমি দখল ও ৪টি গাছ কেটে আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাড. ফেরদৌস আলম কাজল দোকানঘর নির্মানের উদ্দেশ্যে পাকা স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও তিনি জোরপূর্বক নির্মান কাজ চালিয়ে যান।

স্থানীয় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার দ্বারা প্রাথমিকভাবে পরিমাপ করে দেখা যায় ওই জমি ইউনিয়ন পরিষদের। সেখানে স্থাপনা নির্মান করা হলে জনগনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও তিনি সেখানে স্থাপনা নির্মান কাজ অব্যাহত রাখেন। নির্মানাধীন স্থাপনের পাশে পরিষদের নামে থাকা জমি দখল করে স্থানীয় আতোয়ার রহমান দুটি ও সামসুজ্জামান সামু একটি দোকানঘর নির্মান করেন। সেখানে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন পরিষদের সচিব শাহ আলম।

রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান জানায়, তখন ১৯৬২ সাল। রেকর্ডমূলে জমিটি শ্রী বৈদ্যনাথ চন্দ্র মন্ডল, শ্রী ভরত চন্দ্র মন্ডল ও শ্রী লক্ষন চন্দ্র মন্ডল বিক্রি করেন রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের কাছে। সেই কারনে জমিটি পরিষদের নামে আরএস রেকর্ডভুক্ত হয়। যা জনগনের চলাচলের জন্য উল্লেখ করা হয়। আর নকসাতেও ২৯২ দাগটি রাস্তা হিসাবে উল্লেখ আছে এবং ২০১৩ সালে পরিষদ থেকে জমিটির খাজনা পরিশোধ করে। জমির দলিল, রেকর্ড খাজনা খারিজ এবং নকসা সবই পরিষদের নামে। এখানে কারো কোন অংশীদারিত্ব নেই।

২০১৩ সালে মোফাখখারুল ইসলাম চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি জমিটির খাজনা পরিশোধ করেন। আবার সে বছর সামসুজ্জামান সামু ও আতোয়ার রহমান অবৈধভাবে ৩টি ঘর নির্মান করেন। চেয়ারম্যান হিসাবে মোফাখখারুল ইসলাম জমিটির মালিকানা জানা সত্বেও পরিষদের জমিতে কেন ঘর করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

পরিষদের ওই জমির বাঁকী ফাঁকা জায়গায় যখন কাজল নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন তখন প্রথমে রাইগাঁ ভূমি অফিস হাটের জায়গা হিসাবে বাঁধা দেন কিন্তু কাগজপত্র দেখে জানা যায় এটি হাটের জায়গা নয় এটি পরিষদের জায়গা। তখন বিষয়টি পরিষদের নজরে আসে। চেয়ারম্যান হিসাবে আমি প্রথমে ২জন সার্ভেয়ার দিয়ে মাপজোক করে নিশ্চিত হয়। এরপর ওই পরিবারের সদস্যদের ডেকে কথাটি জানায় এবং পাশাপাশি যিনি নতুন স্থাপনা নির্মাণ করছিলেন ফেরদৌস আলম কাজলকেও জানায়। তাই নির্মান কাজ বন্ধ রেখে মাপজোক করার জন্য অনুরোধ করি।

কিন্তু জানিয়ে দেন তিনি আগে ঘর নির্মাণ করবেন তারপর মাপযোক করবেন। আমি বলেছি এটা হয় না। তখন তিনি জানান নির্মানের জন্য পরিষদের অনুমতি লাগে। তিনি তিনি নেয়নি। তিনি পরিষদকে মানেন না। তিনি বলেন, আমি নির্মান কাজ বন্ধ করবো না। এবার তাদের ছোট ভাই পিন্টুকেও বিয়টি জানালেও নির্মান কাজ বন্ধ হয়নি।

আমি কয়েকদিন পর বাধ্য হয়ে মহাদেবপুর ভূমি অফিসে লিখিতভাবে বিষযটি জানায় এবং মাপজোকের জন্য পুনরায় আবেদন করি। মাপজোকের দিনে সামসুজ্জামান সামু, পরিষদের সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন। আমি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দিলেও তারা কর্ণপাত না করায় মহাদেবপুর ভূমি অফিসও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেন। তারপর প্রশাসন জনগনে সম্পদ জনগনকে ফিরিয়ে দিতে বিধিমতে ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন।

মাতাজিহাট ভুমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গত ২০ মার্চ ২০২৩ তারিখে মহাদেবপুর ভুমি অফিস থেকে নোটিশ দেয়া হয়। এক সপ্তাহ পার হলেও ওই প্রভাবশালী নেতা অবৈধ স্থাপনা না সরানোয় এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। আর এ সময় অবৈধ স্থাপনায় ব্যবহৃত ইট ও টিনসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদকে নিলামে বিক্রির জন্য নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান। এ সময় কাজে বাধা দেয়ার জন্য সামসুজ্জামান সামু নামে একজনের ৩ হাজার টাকা জরিমানও করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *