মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা:
ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে কাঁচা আম পাকিয়ে তা সারাদেশে পাঠিয়ে সাতক্ষীরার আমের সুনাম ও ঐতিহ্য নষ্টে মেতে উঠছেন জেলার অসাধু কিছু আম ব্যবসায়ি।

জেলার কিছু অসাধু ব্যবসায়ি আধিক মুনাফা লাভের আশায় অপরিপক্ষ আম গাছ থেকে পেড়ে ক্যামিকেল মিশিয়ে বাজারজাত করছে। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোন না কোন এলাকা থেকে বিপুল পরিমান রাসায়নিকে পাকানো অপরিপক্ষ আম জব্দ করে বিনষ্ট করছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রমাসন ঘোষিত আমপঞ্জি অনুযায়ি আগামী ১২ মে’র আগ পর্যন্ত গোবিন্দভোগসহ কয়েকটি জাতের আম গাছ থেকে ভাঙা বা বাজারজাতকরণ যাবে না। জেলা প্রশাসনের এধরণের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নানা কৌশল অবলম্বন করে অসাধু ব্যবসায়িরা প্রতিনিয়ত সাতক্ষীরা থেকে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম ছড়িয়ে দিচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর বড় বড় বাজারে। সেখানে এসব অসাধু ব্যবসায়িদের খপ্পরে পড়ে সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু আম কিনে রীতিমতো প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা। এতে করে দিনদিন কদর ও সুনাম হারাতে বসেছে সাতক্ষীরার আম।

বিশেষ করে সাতক্ষীরার দেবহাটার কয়েকটি এলাকা ও কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা এবং বালিয়াডাঙ্গাসহ জেলার কয়েকটি স্থান থেকে ট্রাক বোঝাই করে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো আম ঢাকাসহ বাইরের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়িরা।

এমনকি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে কালীগঞ্জ কৃষি অফিসের দুই উপসহকারী কৃষি অফিসার আতাউর ও আব্দুল লতিফের স্বাক্ষর ও সিল জাল করে ভুয়া প্রত্যায়ন বানিয়ে অপরিপক্ষ আমের চালান সরবরাহের প্রমাণ পেয়েছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ.বি.এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।

এদিকে গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তিনটি ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই প্রায় ২০ মেট্রিক টন রাসায়নিক মেশানা অপরিপক্ক আম জন্দ করেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.বি.এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।

এসব ট্রাক ও পিকআপ কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমের চালান নিয়ে যাচ্ছিল। ট্রাকগুলো দেবহাটা উপজেলা হয়ে সাতক্ষীরা অভিমুখে যাওয়ার সময় গোপন সংবাদেও ভিত্তিতে রাসায়নিক মেশানো এসব আমসহ জব্দ করেন তিনি। পরে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে তাতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের অস্তিত্ব মেলায় জব্দকৃত আম বুধবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে দেবহাটা উপজেলা ফুটবল মাঠে নিয়ে বিনষ্ট করা হয়।

দেবহাটার আর কে বাপ্পা জানান, মঙ্গলবার বিকালে তিনটি ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই প্রায় ২০ মেট্রিক টন রাসায়নিক মেশানা অপরিপক্ক আম জন্দ করার পর ফের বুধবার রাতে কালিগেঞ্জর নলতা এলাকা থেকে একটি পিকআপ ভর্তি আম আটক করেছে স্থানীয়রা। আম ভর্তি পিকআপটি বর্তমানে নলতা ইউনিয়ন পরিষদের রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুর এই আম বিনষ্ট করা হবে।

এদিকে অপরিপক্ষ আম ক্যামিকেল দিয়ে পাকানো বন্ধ করতে বুধবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীর উপস্থিতিতে স্থানীয় আম ব্যবসায়িদের সাথে বৈঠকে বসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। বৈঠকে অপরিপক্ষ আম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত না করার বিষয়ে ব্যবসায়িদের কঠোরভাবে সতর্ক করেন। এসময় উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মাদ তিতুমীরসহ দেবহাটা ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আম ব্যবসায়িরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বিগত দিনে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০ হাজার কেজি রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো জব্দ করেছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।

অপরদিকে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো আম বাজারজাত করে সাতক্ষীরার আমের সুনাম নষ্ট না করতে ফেসবুক পোষ্টে জেলাবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির। তিনি লিছেন, ‘প্রিয় সাতক্ষীরাবাসী, অপরিপক্ষ আম কৃত্রিম উপায়ে পাকিয়ে বাজারজাত করে দেশে-বিদেশে সাতক্ষীরার আমের সুনাম নষ্ট করবেন না’।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *