বিশেষ প্রতিনিধি :পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে দুধ ডিম,মাংশসহ সব দ্রব্যের দাম বাড়ছে। কোন রকমই নিয়ন্ত্রনে থাকছে না। নিম্ন আায়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
,
যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে নিত্য দ্রব্যের পাশাপাশি দুধ ডিম,মাংশসহ সব দ্রব্যের দাম সাধারনে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

যশোর জেলায় চাহিদার চেয়ে তিন কোটি ডিম বেশি উৎপাদিত হয়, মাংসের উৎপাদনও চাহিদার তুলনায় ২৮ হাজার টন বেশি।

দুধের উৎপাদনেও উদ্বৃত্ত্ব যশোর। প্রাণি সম্পদ বিভাগের এ তথ্যে যশোরের বাসিন্দারা গর্বিত হলেও খুশি না। বাজারে ডিম মাংসের দাম শুনলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, যশোরে বছরে ডিমের চাহিদা সাড়ে ৪৭ কোটি পিস সেখানে উৎপাদিত হয় ৫০ কোটি ৫৫ লাখ পিস। চাহিদার চেয়ে ৩ কোটি ৫ লাখ ডিম বেশি উৎপাদন হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ডিমের উৎপাদন হয়েছে ৩৩ কোটি ৭০ লাখ পিস । শুধু গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ৩ কোটি ৮৮ লাখ পিস ডিমের উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে দেশি মুরগির ডিম রয়েছে ১০ লাখ।

জেলায় বছরে মাংসের চাহিদা এক লাখ ২৩ হাজার টন সেখানে উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৪০ টন। চাহিদার চেয়ে ২৮ হাজার টন বেশি মাংস উৎপাদিত হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ইতোমধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১৬২ মেট্রিক টন মাংস উৎপাদিত হয়েছে।

শুধু গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ৭ হাজার ৭৮২ টন মাংস উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে গরুর মাংস রয়েছে ৪ হাজার টন, ছাগলের মাংস ১ হাজার ৭৮২ টন এবং ব্রয়লার মুরগি থেকে দেড় হাজার টন মাংস পাওয়া গেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশি মুরগি, বাতিল লেয়ার, সোনালি মুরগী ও হাঁসের মাংস।

বছরে দুধের চাহিদা ২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন সেখানে উৎপাদিত হয় প্রায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮শ মেট্রিক টন । চাহিদার চেয়ে এখানে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন দুধ বেশি উৎপাদিত হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে। শুধু গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ২২হাজার ৬ টন দুধ উৎপাদন হয়েছে।

জেলায় এ সময় দেশি ও শংকর জাতের মিলে প্রায় ৬ লাখ সাড়ে ১৫ হাজার গাভী রয়েছে।

চাহিদার চেয়ে এত বেশি উৎপাদনের পরেও ক্রমাগত দাম বাড়াকে অগ্রহণযোগ্য বলছে ভোক্তারা।

যশোরের চৌগাছা বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা আতিয়ার রহমান জানান, বাজারে দুধ ডিম,মাংশসহ ব দ্রব্যের দাম অস্বা ভাবিক।

এক কেজি গরুর মাংস সাড়ে ৮শ টাকা কোনভাবেই মানা যায় না। খাসির মাংস হাজার থেকে ১১শ টাকা আমাদের সাধ্যের বাইরের বিষয়।

ব্রয়লারের মাংশের দাম এখন ২৬০ টাকা। সোনালি সাড়ে ৩শ টাকা, দেশি মুরগি সাড়ে ৫ শ থেকে ক্ষেত্র বিশেষ ৬ শ টাকা প্রতি কেজি। মাংসের স্বাদ ভুলে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।’

এছাড়া ডিম-দুধ-মাংসের দাম বাড়লেও দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই কারো। বাজারে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও তার কোন সুফল মিলছে না।

চৌগাছার যাত্রাপুর গ্রামের ইসরাফিল জানায় বাবা গরুর মাংস কিনেছে তা মনে নেই। এতদিন পোল্ট্রি খেতাম। তাও কমছে না, দাম অনেক বেশি

চৌগাছা পৌরসভার গৃহবধূ আয়শা জানান, তার দুটি সন্তান। ডিম যতদিন ৮/৯ টাকা করে দাম ছিল তখনো মাঝে মাঝে ছেলে-মেয়েকে ডিম দিয়েছি, এখন আর পারছি না। একটা ডিম দুই ভাগ করে দিলে ছেলে মেয়েরা খেতে চায় না।

গৃহবধূ ফাতেমা বলেন, তার স্বামীর ছাগলের মাংস খুব পছন্দ। যে সময় কেজি ৭শ টাকার মধ্যে ছিল তখন মাসে একবার আধা কেজি হলেও কেনা হতো,এখন তার আয় কমে গেছে, মাংসের দামও বাড়তে বাড়তে হাজার ছাড়িয়েছে।

দাম বাড়ার প্রথম দিকে মাসে দুই এক কেজি গরুর মাংস কেনা হতো তবে অনেকদিন তার পরিবর্তে ব্রয়লার কিনে ছেলে মেয়েকে খাওয়াতে হচ্ছে। এখন তার দামও আড়াইশোছাড়িয়েছে।

গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে কাঠের পুলের এক মাংস বিক্রেতা জানান, দাম বেশি নিলেও এখন লাভ আর আগের মতো নেই। যেমন দামে গরু কেনা হচ্ছে প্রায় সেভাবেই বিক্রি হচ্ছে।

চৌগাছার জগনাথপুর গ্রামের গাভী খামারি মন্টু জানায়,আগে যে খাবার প্রতিটি গরুকে দেওয়া হতো ঠিক ততটুকু খাবার এখন দিতে ডাবলেরও বেশি দাম দিতে হচ্ছে। তিনি এটাও জানান, গম-ভূষি-খৈলসহ গোখাদ্য

আমদানি মাঝে এক প্রকার বন্ধ ছিল, সে সময় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুধের দামও বাড়াতে হয়েছে। তারপরও খামার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাজারের ডিম দোকানিরা বলেন, তারা পাইকারি ডিম কিনে বাজারে বিক্রি করেন, যেমন কেনা একপ্রকার নামকা ওয়াস্তে লাভ রেখে বিক্রি। তবে তারা স্বীকার করেন দাম বেড়ে যাওয়ার পর বেচাকেনা অনেক কমে গেছে।

বড় বড় খামারির কারণে ব্রয়লার, সোনালি মুরগি ও গরুর দাম নিয়ন্ত্রণহীন হচ্ছে। আর একটার দাম বাড়লে অন্য পাশও থেমে থাকে না তাই ছাগলের মাংসের দাম, দুধের দাম বেড়েই চলেছে।

তাছাড়া, জবাব দিহিতা না থাকায়, বাজার ও দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ভূমিকা না থাকাও অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন তারা।

ডিম-দুধ-মাংসের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে যশোরের ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হোসেন জানান, দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ জড়িত।

তবে সরাসরি প্রভাব ফেলছে খাদ্যের দাম। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটে টাকার দাম কমে যায় এবং আমদানি পণ্যের দাম খুব বেশি বেড়ে গেছে।

ফলে গো খাদ্য, মুরগির খাদ্যে অনেক খরচ হচ্ছে। তারমতে, একজন খামারির মোট ব্যয়ের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যয় এখন খাদ্যখাতে হচ্ছে, ফলে উৎপাদন বেশি থাকলেও কমছে না ডিম-দুধ-মাংসের দাম। সেই সাথে বেড়ছে সব পণ্যের দাম।

One thought on “পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে দুধ ডিম,মাংশসহ সব দ্রব্যের দাম বাড়ছে”
  1. পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে দুধ ডিম,মাংশসহ সব দ্রব্যের দাম বাড়ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *