ডেস্ক নিউজ:দেশে শুধু একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। এ ক্ষেত্রে বাতিল হতে পারে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। গঠন করা হচ্ছে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি বা এনটিএ।

আগামী বছর থেকেই নতুন এই পদ্ধতির মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এ লক্ষ্যে সোমবার (৩ এপ্রিল) এনটিএর গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একটি ইউনিক কাঠামো গঠন নিয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং অভিভাবকদের ব্যয় কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেখানে সব বিশ্ববিদ্যালয় অংশ না নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমেনি।

বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেড়েছে। গত দুই বছর গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকেরও অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছর গুচ্ছ থেকে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় গুচ্ছ পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সূত্র মতে, এনটিএর অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ লক্ষ্যে সোমবার শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে কোর কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। এতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি ভিসিদের সংগঠন (উপাচার্য পরিষদের) সভাপতিকেও ডাকা হয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং আর্থিক সাশ্রয়ের লক্ষ্যে তিনটি গুচ্ছে বর্তমানে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। তবে এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয় আসেনি।

অন্যদিকে, গুচ্ছ ভর্তিতে নানা জটিলতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে গুচ্ছের আসল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। এই অবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এক ছাতার নিচে এনে একটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যেই গঠন করা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)।

এনটিএর গঠন ও কার্যপরিধির বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, গত সপ্তাহের সভায় এনটিএ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এমন সংস্থা আছে। তবে এটি এখনই গঠন করা সম্ভব হবে না। জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকার এলে এটি বাস্তবায়নের চিন্তা রয়েছে। আপাতত সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে প্রচেষ্টা চলছে।

এদিকে এনটিএ নামের এই সংস্থা কেমন হবে তা স্পষ্ট নয়। তবে নীতিনির্ধারকরা প্রাথমিক একটি ধারণা দিয়েছেন। এ সংস্থা গঠনে পৃথক একটি আইন করারও প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের আগে এর কার্যক্রম শুরু সম্ভব নয়।

ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও উন্নত দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। সেখানে পরীক্ষা নিয়ে স্কোরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হয়। বিষয়টি আইইএলটিএস, জিআরই-এর মতো। বাংলাদেশেও সে ধরনের সংস্থা গঠনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এতে ভারতীয় মডেলটি আলোচনায় আসছে বেশি। ভারতে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশে এ ধরনের সংস্থা গঠন হলে সেখানে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট বোর্ড থাকবে পিএসসির আদলে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেবে বোর্ড। পরীক্ষার জন্য একটি প্রশ্ন ব্যাংক থাকবে। পরীক্ষা হবে কম্পিউটারভিত্তিক।

অঙ্ক থাকলে সেটি খাতায় লিখে আপলোড করতে হবে। সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্কোর দেওয়া হবে। সে স্কোরের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।

জানা গেছে, এ ধরনের পরীক্ষা বছরে দুবার হতে পারে। জানুয়ারি ও বছরের মাঝামাঝি। প্রথমবার যারা ভর্তি হবেন তারা দ্বিতীয়বার আর ভর্তির সুযোগ পাবেন না।

পরের পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা ভর্তির সুযোগ পাবেন। পরের বছর একই প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা হবে। আইইএলটিএস কিংবা জিআরই’র আদলে পিএসসির মতো সংস্থার অধীনে এ ধরনের কার্যক্রম চালানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *