যশোর প্রতিনিধি:যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) কর্মরত আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের গুরুদণ্ড হিসেবে চাকরি থেকে ছয় জনকে বরখাস্ত ও দুজনকে বাধ্যতামূলক অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

শনিবার (১৩ মে) দুপুরে যবিপ্রবির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ৯০তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে সনদ যাচাই সংক্রান্ত তিনটি আলাদা কমিটি ৮২তম রিজেন্ট বোর্ডে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তদন্ত বোর্ড তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। পরবর্তীকালে রিজেন্ট বোর্ড ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় জাল সনদধারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

রিজেন্ট বোর্ডের সভায় টেকনিক্যাল অফিসার মো. জাহিদ হাসান (স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) মো. জাহাঙ্গীর আলম (স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) মো. সাকিব ইসলাম (স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) মোছা. হাসনা হেনা (স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), সিনিয়র ক্লিনার দিলীপ হরিজন (অষ্টম শ্রেণি), ক্লিনার বাসুদেব দাস (অষ্টম শ্রেণি) গুরুদণ্ডের শাস্তি স্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

একইসঙ্গে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) মো. মহিদুল ইসলাম (স্নাতকোত্তর, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়), মেকানিক মো. জাকির হোসেনকে (স্নাতকোত্তর, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়) গুরুদণ্ডের শাস্তিস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাধ্যতামূলক অবসরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এর মধ্যে টেকনিক্যাল অফিসার মো. হেলালুল ইসলামের (স্নাতক, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যলয়) বিষয়ে তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন গ্রহণ করা হলেও আইনি জটিলতা থাকায় তা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগকৃত আইনজীবীর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

রিজেন্ট বোর্ডের সভায় জানানো হয়, যবিপ্রবির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. হায়াতুজ্জামানের নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় এ প্রতিবেদন গ্রহণ করে, বিধি অনুযায়ী তা তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত বোর্ড গঠনপূর্বক সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

একইসঙ্গে যবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ আল-মামুনকে মারধরের ঘটনা গভীরতা বিবেচনায় নিয়ে যবিপ্রবির নিরাপত্তা সুপারভাইজার মো. বদিউজ্জামান বাদলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বহাল রাখা হয়। এছাড়া ঘটনা তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির মায়ের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

যবিপ্রবির উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবু ইউসুফ মিয়া, যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন-৩) সৈয়দা নওয়ারা জাহান, সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ, যশোরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাওছার উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম শাহী আলম, ইউজিসি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এম. এ. রশীদ, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব, যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান, রেডিয়েন্ট ফার্মার চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, রিজেন্ট বোর্ডের সচিব ও যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *