মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ নওগাঁর রাণীনগরের আতাইকুলা মধ্যপাড়া গ্রামের আজিজুল ইসলামের কলেজ পড়–য়া ছেলে আব্দুল্লাহর (২১) সঙ্গে একইগ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে আতাইকুলা জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তারের (১৫) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রায় ৬মাস আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এরপর গত মঙ্গলবার (২মে) মেয়ে সাদিয়া বিয়ের দাবী নিয়ে ছেলের বাড়িতে এসে অনশন শুরু করে। বিষয়টি মেয়ের পরিবার জানলেও মেয়েকে নিতে তারা অস্বীকার করে। ঘটনার দুইদিনেও যখন মেয়ের পরিবারের লোকজন মেয়েকে নিতে না আসলে ছেলের পরিবার গ্রামের কতিপয় মাতবরদের পরামর্শে গত ৪এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

মেয়ে সাদিয়া জানায় আব্দুল্লাহকে সে ভালোবাসে। কিন্তু আব্দুল্লাহর সঙ্গে তার বিয়ে পরিবার মেনে নিবে না মর্মে সে ছেলের বাড়িতে চলে এসেছে। সে ছেলেকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার বিয়ে করার বয়স হয়নি তাহলে সে কেমন করে আব্দুল্লাহকে বিয়ে করবে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি মেয়ে সাদিয়া।

ছেলের মা জেসমিন মুঠোফোনে জানান মেয়ের পরিবারকে মেয়েকে বুঝিয়ে ফেরত নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করার পরও তারা যখন দুইদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও মেয়েকে নিতে অস্বীকার করে তখন উপায় না পেয়ে গ্রামের মাতবরদের পরামর্শে আদালতের মাধ্যমে ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি তাহলে তারা কিভাবে বিয়েটি আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন করলো এমন প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

আতাইকুলা গ্রামের মাতবর হামিদুল জানান ছেলের পরিবারের দাবীর ভিত্তিতে সমস্যাটি আমরা গ্রামে বসেই সমাধান করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মেয়ের পরিবারের আগ্রহ না থাকায় আর সমাধান করা যায়নি। তাই ছেলের পরিবারকে আদালতের মাধ্যমে ছেলে ও মেয়ের বিয়ে দেয়ার পরামর্শ প্রদান করি।

নওগাঁ কোর্টের আইনজীবী আব্দুর রহিম বলেন কোন বিয়েই আদালতের এফিডেভিটের মাধ্যমে আইনগত বৈধ নয়। তার উপর আবার এই বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের যেহেতু বিয়ের বয়স হয়নি তাই আদালতের মাধ্যমে এমন বিয়ে কখনই আাইনগত বৈধ নয় এবং বিয়ে দেয়াও সম্ভব নয়। হয়তোবা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কতিপয় চক্রের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে এই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে এমন বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের পরিবার যে কোন সময় তাদের মেয়েকে ফেরত পাওয়ার আশায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

এছাড়া এই ধরণের বিয়ে কখনো স্থায়ীও হয় না। তাই আমাদের সবাইকে বিয়ের মতো অধিক গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে একটু ভালো ভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কোন বিকল্প নেই। তবে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু দুই বছরের মধ্যও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রয়েছে সেহেতু এই ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে যদি একটি কিংবা দুইটি বিয়ের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তর মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে আগামীতে বাল্যবিয়ের প্রবণতাটা অনেকটাই কমে আসতো বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন যদি এই বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *