জিললুর রহমান,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরায় সরকারিভাবে পাকা আম সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে শুক্রবার (৫ মে) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা পৌরসভার কুকরালি গ্রামের ব্যবসায়ি মোকছেদ আলীর আমবাগান থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফতেমা তুজ জোহরা এর সভাপতিত্বে আম ভাঙার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মঈনুল ইসলাম। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন, উপসহকারী কর্মকর্তা মোঃ আরাফাত হোসেন কৃষি কর্মকর্তা প্লাবনী সরকার, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কণ্যাণ ব্যাণার্জী প্রমুখ। এসময় জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি বলেন, সাতক্ষীরার আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। যদি হিমসাগর আম নির্ধারিত সময়ের আগে পাকে তাহলে আলোচনা সাপেক্ষে ভাঙার সরকারি তারিখ এগিয়ে আনা হবে। চলতি মৌসুমে ২০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যে আদেশ পাওয়া গেছে। এ খবরের পর আরো আম বিদেশে যাবে। আমরা চাই সারা বাংলাদেশে এ আম পৌঁছে দিতে ও কৃষকের যাতে ক্ষতি না হয়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় চার হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আম বাগান রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯টি। আম চাষীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১০০ জন। সাতক্ষীরার আম পঞ্জিকা অনুযায়ি শুক্রবার (৫মে) প্রথম দফায় গোবিন্দ ভোগ, গোপাল ভোগ, সরাই খাস, গোলাপ খাসসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু করা হয়েছে। হিমসাগরের জন্য ১০ মে, ল্যাংড়ার জন্য ১৮ মে , আ¤্রপালি ২৮ মে দিন ধার্য করা হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি করা যাবে।

আমচাষী কুকরালির গোলাম মোস্তফা, মোকছেদ আলী, বাগান মালিক লিয়াকত হোসেনসহ কয়েকজন জানান, সাতক্ষীরার বেলে দোঁয়াশ মাটি ও জলবায়ু আম চাষের উপযোগী। এখানকার আম সুস্বাদু। ২০১৪ সাল থেকে ফ্রান্স ও ইটালীসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আবহওয়ার কারণে এবার কালিগঞ্জ, দেবহাটার আম আগে থেকে পাকা শুরু করে।

কিন্তু কৃষি বিভাগ প্রথম দফায় আম ভাঙার দিন ১২ মে ঘোষণা করে। পরে পরিস্থিতি অনুযায়ি আম পাড়ার তারিখ ৭ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। তাপদাহ ও ঝড়বৃষ্টিতে আমের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে গোবিন্দ ভোগ ও গোপাল ভোগ মণ প্রতি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ দাম ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা না হলে চাষী ও ব্যবসায়িদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। এ পর্যন্ত রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো ৭০ হাজার মণ অপরিপক্ক আম ভ্রাম্যমান আদালতে নষ্ট করেছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া হিমসাগর আম ভাঙার তারিখ ২৫ মে থেকে এগিয়ে না আনলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে এবারও হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম বিদেশে যাবে।

সাতক্ষীরার আম রপ্তানিকারক সংস্থা উত্তরণ এর সলিডেরেট শাখার কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নবম বারের মত হিমসাগর ও ন্যাংড়া আম এবার ১৬ অথবা ১৭ মে এর পর বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

বর্তমানে ৫০ মেট্রিক টণ আম পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, গোবিন্দভোগ আম পাড়ার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হলো। সাতক্ষীরার আম একটি ব্রা-। আমরা চাই দেশ ও দেশের বাইরে এ আম পৌঁছে যাক।
প্রসঙ্গতঃ জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত ১২ মে তারিখ থেকে গোবিন্দভোগ সহ বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের

কথা ছিলো। কিন্তু এসব আম গরমে তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছিলো। এছাড়া রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করছিলো বেশ কিছু ব্যবসায়ী। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার কেজি অসময়ে সংগ্রহ করা আম ও রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম জব্দ করে ধ্বংস করেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর প্রমাসনের পক্ষ থেকে এসব আম পাড়ার নির্ধারিত তারিখ বদলে ১২মে’র পরিবর্তে ৫মে করা হয়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *