মুহা: জিললুর রহমান,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরায় ঈদুল ফিতরের আগের রাত থেকে পরেরদিন রাত পর্যন্ত ৪৮ঘন্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬জন। আহত হয়েছেন অন্ততঃ অর্ধশতাকি। বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর কারণে ওই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নিহতদের মধ্যে পিতা-পুত্র ও আপন দূই ভাইসহ মোট ৬জন রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রোববার (২৩ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে সাতক্ষীরার বাইপাস সড়কের কামালনগর এলাকায় কফি এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পিতা ও ছেলেসহ ৩জন নিহত হয়েছেন। এঘটনায় আরো ৬জন আহত হয়।
নিহতরা হলেন, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের আজিজুর রহমান সরদারের ছেলে আব্দুল বারি (৫৫), তার ছেলে রেজোয়ান (২৫) ও সাতক্ষীরা সদরের খানপুর গ্রামের ওমর ফারুকের ছেলে মাহমুদুর রহমান (৩৬)।
কলারোয়া উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, আব্দুল বারি ও তার ছেলে রেজওয়ান আহমেদ বকচরা এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে বাইপাস সড়কের পাশে মোটরসাইকেলে বসে ছিলেন। এসময় লাবসার দিক থেকে দ্রুগতিতে আসা জনৈক মাহমুদুর রহমানের মোটরসাইকেল আব্দুল বারির মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে আব্দুল বারি রাস্তায় পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত রেজওয়ান আহমেদকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, সাতক্ষীরা সদরের খানপুর গ্রামের আনিসুর রহমান জানান, এ ঘটনার গুরুতর আহত অপর মটরসাইকলে চালক মাহমুদুর রহমানকে প্রথমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে চুকনগর এলাকায় পৌঁছালে তার সে মারা যায়।
আনিসুর রহমান আরো জানান, দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেলের সাথে দুই পাশ থেকে আসা আরো তিনটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হলে সদরের রইচপুরের আব্দুল হাকিম, কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা গ্রামের কপিলউদ্দিনের ছেলে সাবিরুলসহ ছয়জন আহত হয়। তাদেরকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকররুল আলম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতদের লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাতে সাতক্ষীরার তালায় ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার সময় পৃথক দুটি ঘটনায় ৩ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছে। সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের নোয়াপাড়া ও খলিশখালীর হাজরাপাড়া নামক স্থানে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
তালার হাজরাপাড়ার দুর্ঘটনায় আহত সুজন গাজী (২৫) জানান, ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা ৩জন মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে হাজরাপাড়া নামকস্থানে পৌছুলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সাথে ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় সুজন গাজীসহ তালার মাগুরা গ্রামের আসাদ মোড়লের দুই ছেলে ইমরান হোসেন (১৯) ও রিফাত হোসেন (১৬) গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে ইমরান হোসেনের মৃত্যু হয়। তার অপর ভাই রিফাত হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে সেও মারা যায়। ঈদের দিন সকালে দুই ভাইয়ের মৃতদেহ গ্রামে পৌছুলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আহত সুজন গাজী একই গ্রামের মিঠু গাজির ছেলে।
পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়চি নিশ্চিত করেন।
এদিকে অপর ঘটনায় নিহত শেখ শাহিন (২৬) তালা উপজেলার ধলবাড়িয়া এলাকার আব্দুল বারিক শেখের ছেলে। সে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতো। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ আলামিন জানায়, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে আসে শাহিন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মির্জাপুর বাজারের কেনাকাটা শেষে মোটরভ্যান যোগে বাড়িতে ফিরছিল সে। পথিমধ্যে নোয়াপাড়া বাজারে আসলে দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল ভ্যানটিকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে শাহিন ছিটকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে খুলনায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আলামিন আরও জানান, স্থানীয়রা ওই সময় দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল চালককে আটক করে।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরীর করিম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে ঈদেরদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পৃথক মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৪৮ জন আহত হয়। বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর কারণে বাইপস সড়ক সহ শহরের আশপাশ এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ৩০ জনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও ১৮ জনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *