মুহা: জিললুর রহমান,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: ফয়সাল আহমেদ এর বিরুদ্ধে এক আউট সোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে মঙ্গলবার (৪এপ্রিল) সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি আউট সোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মী মাসুদ রানা।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: ফয়সাল আহমেদ এর বিরুদ্ধে হাসপাতালের কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরনের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। এমনিতে তিনি হাসপাতালে তো ঠিকমত আসেন না। যথাযথভাবে পালন করেন না সরকারি দায়িত্ব। আবার আসলেও ‘এর হুমকী ওর মারধর’ করে শক্তির মহড়া দিয়ে চলেছেন তিনি।

এছাড়া সদর হাসপাতালের কাছেই রয়েছে তার নিজস্ব মালিকাধীন বেসরকারি হাসপাতাল “হার্ট ফাউন্ডেশন”। সদর হাসপাতালে সময় দেয়ার চেয়ে নিজের হাসপাতালে বেশি সময় ব্যয় করেন তিনি। সেখানে চিকিৎসার নামে রোগীদের হয়রানি করার একাধিক অভিযোগ রযেছে।

রোগী ভর্তি করার পর জোরপূর্বক অধিক অর্থ আদায় করা হয়। অতিরিক্ত টাকার দাবিতে গত রোববার (২ এপ্রিল) টাকার জন্য মুমূর্ষু এক রোগীকে আটকে রেখে স্বজনদের পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে হার্ট ফাউন্ডেশনে বিরুদ্ধে।

টানা ৩ ঘন্টা রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সে আটকে রাখার পরে সদর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে রোগী ও তার স্বজনদের উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ওই রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

এদিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট (আউট সোর্সিং) মাসুদ রানা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে তিনি তার কর্মস্থলে বসে কাজ করছেন। এসময় আরএমও ডা: ফয়সাল আহমেদ উক্ত রুমে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে প্যাথলজিস্ট রবিন বাবুর সাথে কথা বলেন। এরপর মাসুদ রানার নাম শুনে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে মারতে মারতে বের করে দেন। অভিযোগে আরও জানিয়েছেন দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এমন অশোভন আচরণ কেউ করেনি। মাসুদ রানা লিখিত অভিযোগে ঘটনার সুষ্ট তদন্ত এবং বিচার দাবী করেছেন।

মাসুদ রানার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারিরা অভিযোগ করে বলেন, আরএমও’র খেয়াল খুশিতে চলছে এখন সদর হাসপাতাল।

তারা বলেন, মাসুদ রানার সাথে এমন আচরণ সত্যি হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের কর্মচারিদেরও ভাবিয়ে তুলেছেন। তবে এরআগে আরেক এমএলএসএস আনারুল ইসলামকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন তিনি। শামসুর রহমান নামের আরো একজন এমএলএসএসকে মারপিট করেন।

মারপিট করে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন সদর হাসপাতালের বাবুর্চি বাবুকে। এভাবে ক্ষমতাধর আরএমও’র এখন শাসানো মারপিট গলাধরে বের করে দেওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এনিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সাতক্ষীরার সাধারণ সম্পাদক ডা: মনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি ঘটনা শুনে হতবাক হয়ে বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছেনা। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপ করে সংকট উত্তরণের চেষ্টা করা হবে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: ফয়সাল আহমেদ স্বাস্থ্যকর্মী মাসুদ রানাকে মারপিটের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, সে আমাদেও হাসপাতালের একজন স্টাফের ছেলে। ঠিকাদারের মাধ্যমে আউট সোর্সিং কর্মী হিসাবে তার নিয়োগ সুইপার পদে। কিন্তু সে কাজ করে ল্যাবে।

সারাদনি সে ল্যাবে বসে সময় কাটায়। মঙ্গলবার নিয়মিত পরিদর্শনে হাসপাতালের ল্যাবে গেলে একজন আরএমও হিসাবে সবাই আমাকে সম্মান জানালেও সে চেয়ার বসে ছিল। এসময় তার কজের বিষয় তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কোন উত্তর দেয়নি। যে কারণে আমি তাকে ল্যাব থেকে বের করে দেই। পরে অফিসের দারোয়ান হিসাবে আমি তার কাজের ব্যবস্থা করেছি।

এবিষয়ে সিভিল সার্জন ডা: সবিজুর রহমান বলেন, আরএমও ডা: ফয়সাল আহমেদ কর্তৃক আউট সোর্সিং কর্মী মাসুদ রানাকে মারপিট করার বিষয়ে আমার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। আমি অভিযোগটি দেখেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *