শহিদুল ইসলাম,মহেশপুর(ঝিনাইদাহ):
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনে প্রায় বিশজন ব্যক্তি প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে তাঁরা গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে প্রচারণা বোর্ড ঝোলাচ্ছেন। এতে সরকারি বনজসম্পদ ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
জানা গেছে, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার মহাসড়কসহ প্রতিটি রাস্তার দুই পাশের গাছ ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত ঢেকে ফেলা হয়েছে প্রচার বোর্ডে। বিগত দিনগুলোতে অল্প শুভেচ্ছা বার্তার বিলবোর্ড দেখা যেত। এবার তা বেড়েছে। অন্য দলের দু-একজনের প্রচার বোর্ড খুবই সীমিত দেখা গেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় দেড় ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয়। তাঁদের রং-বেরঙের প্রচার বোর্ড লাগাতে মূল্যবান গাছগুলো ব্যবহার হচ্ছে।
মহাসড়কের দুই পাশের গাছ, শহর এবং গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারের মধ্যবর্তী একেকটি গাছে ১০-১২টি পর্যন্ত প্রচার বোর্ড ঝোলানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ছায়াবেষ্টিত দাঁড়িয়ে থাকা গাছেরও একই অবস্থা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে, সড়কের মোড়ে বড় বড় প্রচার বোর্ড স্থাপন করায় চালকরা সামনে বেশি দূর দেখতে পারেন না। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
গাছে পেরেক মেরে প্রচারণা চালানোদের মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছেন সংসদ সদস্য (এমপি) নবী নেওয়াজ, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী, সাবেক এমপি পারভীন তালুকদার মায়া, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক রেজাউল করিম টিটন, কোটচাঁদপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুননেছা মিকি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক অজিবর রহমান মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এম এম জামান মিল্লাত, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোকনুজ্জামান প্রিন্স। বিএনপি থেকে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কণ্ঠশিল্পী মনির খান, সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান রনি, বিএনপি নেতা লতিফুর রহমান চৌধুরী ও মাহফুজুল হক খান বাবু মিয়ার প্রচারণাও দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর শুরা সদস্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান এবং ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মাওলানা তাহাবুর রহমান প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কোটচাঁদপুরের বন কর্মকর্তা আবু নাঈম মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, ‘নেতারা হাজার হাজার গাছের ক্ষতি করছেন। তবু কিছুই করার নেই। এ ব্যাপারে আমরা চরম অসহায়।’
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘গাছে গজাল বা পেরেক ঠুকলে এখনি এর ক্ষতি বিষয়টি বোঝা যাবে না। এতে গাছ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষমতা হারাবে। অতিরিক্ত মাত্রায় বড় পেরেক ঠুকলে ধীরে ধীরে গাছ শুকিয়ে মারা যাবে।’
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘রাস্তার পাশের গাছগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত। যেমন পৌরসভা, জেলা পরিষদ, বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আমার আওতাধীন কিছু গাছ আছে ইউনিয়নের মধ্যে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি সম্মিলিতভাবে গাছে পেরেক ঠুকানোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় দেখব।’
বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী আমিরুজ্জামান খান শিমুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড়ে আমরা প্রচার বোর্ড মারার জায়গাই পাচ্ছি না। আমার প্রচার বোর্ড যা সাঁটানো হয়েছে তা বাঁশের সাহায্যে। কর্মীদের বলা আছে, পেরেক ঠুকে প্রচার বোর্ড গাছে না ঝোলাতে।’
এ বিষয়ে এমপি নবী নেওয়াজ বলেন, ‘কেউ কিছু না বলায় গাছে পেরেক ঠুকে প্রচার বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া কালচারে পরিণত হয়েছে। অবশ্য গাছে এভাবে বিলবোর্ড লাগানো ঠিক না। এতে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগে এভাবে ভেবে দেখিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার কর্মীদের বলব এবার থেকে বাঁশ মাটিতে পুঁতে তবেই প্রচার বোর্ড ঝোলাতে। এটা সবার করা উচিত।’