বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগ,বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয়সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছ থেকে সময় নিয়ে সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। তাদের আওয়ামী লীগের দপ্তরেও যোগাযোগ করতে বলা হয়। তবে সম্মেলন আয়োজনে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
এ সুযোগে সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সম্মেলন আয়োজনে আরও অন্তত চার-পাঁচ মাস সময় নিতে চাইছেন।
তারা বলছেন-জুন-জুলাই বৃষ্টির মৌসুম। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কুরবানির ঈদ রয়েছে। এরপর আছে জাতীয় শোকের মাস আগস্ট। তাই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের আগে তারা সম্মেলন আয়োজন করতে চাইছেন না।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠন গুলোর বৈঠকে ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়।
ওই বৈঠকেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দ্রুত সম্মেলন আয়োজন করার নির্দেশ দেন।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি অনুযায়ী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হবে।
বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বলেন, বৈঠকে ১৭ মে নেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস জাঁকজমকভাবে পালন করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগকে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় প্রস্তুত। সম্মেলন আয়োজনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। সামনে জাতীয় শোকের মাস আগস্ট আছে, ঈদ আছে, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আছে।
এছাড়া আমাদেরও কিছু কাজও আছে। তাই আমরা চিন্তা করছি, আগস্টের পরে নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা করে তিনি তারিখ দিলে আমরা সম্মেলন করে ফেলব।
যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, আমরা এখন কাউন্সিলর-ডেলিগেটসদের তালিকা প্রস্তুত করাসহ সম্মেলনকেন্দ্রিক অন্যান্য কাজ শুরু করব। সম্মেলন আয়োজনে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যখন সময় দেবেন, তখন সম্মেলন করে ফেলব। জুন-জুলাইয়ে অনেক বৃষ্টি হয়। এছাড়া সামনে ঈদ আছে। এরপর আগস্ট মাস আছে। তাই আমরা চিন্তা করছি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সম্মেলন করব।
একই বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আজকের বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোকে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুত আছি।
নেত্রী সময় দিলেই আমরা সম্মেলন করে ফেলব। কত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজন করা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমরা আমাদের অভিভাবক ও নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার শিডিউল নেব।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন। তার আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত হয়।
পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
একই সময়ে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের সভাপতি ও সাধারাণ সম্পাদক করা হয়।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালের ৫ মার্চ। তখন নাজমা আক্তারকে সভাপতি ও অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
২০১৭ সালের ১৭ মার্চে সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অপু উকিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হন।
আর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম।
তার আগের সম্মেলন হয়েছিল ২০০৩ সালের ১২ জুলাই। ওই সম্মেলনে আশরাফুন্নেসা মোশাররফ সভাপতি ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা সাধারণ সম্পাদক হন। পরে পিনু খান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন সামনে রেখে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদকে।
২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে।
এছাড়া দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের তথ্য হালনাগাদ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে মহানগর উত্তর-দক্ষিণের মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।
একই সঙ্গে ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি পালন করতে ঢাকা মহানগরের নেতাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে।