Breaking News

দায়িত্বশীল ও অধিনস্তদের ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী

ঃপ্রভাষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমঃ

قال رسول الله ﷺ:
“كلكم راعٍ وكلكم مسؤولٌ عن رعيته،
فالإمام راعٍ وهو مسؤولٌ عن رعيته،
والرجل راعٍ في أهله وهو مسؤولٌ عن رعيته،
والمرأة راعيةٌ في بيت زوجها وهي مسؤولةٌ عن رعيتها،
والخادم راعٍ في مال سيده وهو مسؤولٌ عن رعيته،
وكلكم راعٍ وكلكم مسؤولٌ عن رعيته.” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
এখানে দায়িত্বশীল বলতে একক কোন ব্যাক্তি ও শ্রেণীকে বুঝানো হয় নাই। পৃথিবীর সমস্ত শ্রেণীর মানুষ ও কর্মের দায়িত্ব প্রাপ্তশীলদেরকে বুঝানো হয়েছে।

পরিবার থেকে শুরু করে চাকরি বাকরি, অফিস আদালত এমন কি রাষ্ট পর্যন্ত, যে যেখানেই দায়িত্বশীলের ভুমিকায় আছেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাব দিতে বাধ্য। অথচ আমরা যে যতটুকু ক্ষমতা পেয়েছি, সেখানেই ক্ষমতারর অপব্যবহারে ব্যাস্ত ।

একটুও চিন্তা করছি না যে, আমার জীবন ও এই ক্ষমতা মুর্হুতেই শেষ হতে পারে, যা স্থায়ী নয়। আর তখনই আসল বিচারের কাটগড়াই দাড়াতে হবে। যেখানে ন্যায় ও ইনসাফ পূর্ণ বিচারের কোন কমতি থাকবে না। পবিত্র কুরআনের আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذ ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠ ﴾ [النحل: ٩٠]

অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (সূরা নাহ্‌ল ৯০ আয়াত)
সুরা মায়েদা ২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমরা একে অপরকে নেক ও আল্লাহ ভীত্তির কাজে পরস্পর সাহায্য করো, আর কখনোই পাপ ও সিমালংঘনে কাউকে সহোয গীতা করো না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥] অর্থাৎ “তোমার অনুসারী (অধিনস্ত ) মুমীনদের প্রতি তুমি সদয় হও।” (সূরা শুআরা, আয়াত- ২১৫।

আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশী লতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে।

পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্ব শীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্ব শীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।

তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৩৯, ইসলামিক ফাউ ন্ডেশন- ৬৬৫৩)

আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সা: বলেছেন, কেউ তার অধীনস্থকে অন্যায়ভাবে একটি বেত্রা ঘাত করলেও কিয়ামতের দিন তার থেকে তার বদলা নেয়া হবে’ (তাবরানি)।

আবু বকর রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সা: বলেছেন, অধীনস্থদের প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহা রকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’ (ইবনে মাজাহ)।

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, আমরা প্রত্যেকে যে যেখানেই দায়িত্বশীল বা বস বা আমীর বা কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, সবর্দা মনে রাখতে হবে আমাদের আসল ঠি কানা পরকালের জীবন।

সুতারং সবর্দা নিজের কষ্ট হলেও অধিনস্তদের সাথে অশ্লীল আচারণ, জুলুম ও কষ্ট না দেয়া।কারণ এসব নিয়ে নিশ্চিত আল্লাহর কাটগড়ায় আমাদের দাড়াতে হবে।

তখন কোন বসই ঠেকাতে পারবে না। এমন কি কোন নেতা গিরী ও অর্থ সম্পদও কাজে লাগবে না ।

অপর এক হাদিস থেকে জানা যায়, যে মুসোলমান তার অপ র কোন ভাইয়ের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ তায়ালাও তার দোষ গোপন করবে।

আর যে কোন বিপদ থেকে রক্ষা করবে আল্লাহও তার বিপদ থেকে রক্ষা করবে। সুতারং সাবধান!!!। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন।

অধিনস্তদের সাথে ভালো আচারণ করার তাওফিক দান করুন। ইসলাম দায়িত্ব ও আমানতের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রত্যেকের কাছ থেকে জবাব চাইবে তার আমানত সম্পর্কে।

প্রত্যেক ব্যক্তিই তার অবস্থান অনুযায়ী দায়বদ্ধ—
* রাষ্ট্রপ্রধান নাগরিকদের জন্য।
* পিতা তার সন্তানদের জন্য।
* স্ত্রী গৃহপরিচালনার জন্য।
* কর্মচারী তার নিজ দায়িত্বের জন্য।
* অফিসের প্রধান তার অধিনস্তদের জন্য।
##নৈতিক শিক্ষা:
দায়িত্ব পালন মানেই ইবাদত।
অবহেলা মানে গুনাহ। একটা সমাজে তখনই শৃঙ্খলা, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়, যদি সবাই তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বোঝার ও পালন করার তৌফিক দিক, আমিন।

@@লেখক, ফকীহ্, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল ০১৯১১৬০৪৪৫৫

About admin

Check Also

যাকাত প্রদান ও পরিকল্পিত দায়িত্ববোধই করতে পারে বিশ্বকে দারিদ্র্য মুক্ত!!

জাহাঙ্গীর আলম : আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস প্রতি বছর ১৭ অক্টো বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। …

One comment

  1. দায়িত্বশীল ও অধিনস্তদের ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীঃ