ডেস্ক নিউজ:আজ (৩০ এপ্রিল) শুরু চলতি বছরের এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও সমমানের পরীক্ষা। এ বছর সব বিষয়েই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দেবে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলবে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা হবে। সৃজনশীল ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে আগের মতোই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, এবার মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ জন ছাত্র ও ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৭ জন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এসএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করে।

এদিকে, পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে শিক্ষা ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত আরো তিনটি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার (২৯) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো অফিসিয়াল ছুটি হলেও একটি টিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন। বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে একটি টিম ফেসবুক তদারকি করছে। এর সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও কাজ করছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, আজ (শনিবার) থেকে ফেসবুক ও মোবাইল লেনদেন নজরদারি শুরু করেছে বিটিআরসি। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও বিটিআরসিতে থাকবে। এছাড়াও ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করা হবে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে।

তপন কুমার সরকার জানান, প্রশ্নঁফাস হওয়ার চেয়ে গুজব ঠেকানোই বড় কঠিন। কারণ প্রশ্নঁফাস করা কঠিন কিন্তু গুজন ছড়ানো সহজ। ২৫ এপ্রিল পরীক্ষা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত হয়।

প্রশ্নফাঁস ও গুজব ঠেকাতে যেসব পদক্ষেপ : পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিটিআরসিকে সর্বোচ্চ সতর্ক রাখা হয়েছে। যেসব গ্রুপ বা ব্যক্তি ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়াবে বা প্রশ্নফাঁস করে দেবে বলে প্রচার চালাবে তাদের আইডি শনাক্ত করে পুলিশের বিশেষ শাখা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দেওয়া হবে।

এরকম গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের মোবাইল লেনদেনও নজরদারিতে থাকবে। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস নিয়ে গুজব এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেনে নজর রাখা হবে। প্রশ্ন ছাপানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজি প্রেসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে। এমনকি প্রশ্ন সর্টিং ও বহনে জড়িত শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও থাকবেন নজরদারিতে।

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আরো যেসব পদক্ষেপ থাকছে : ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীর দেরি হলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিখে রাখা হবে।

ট্রেজারি/থানা থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাচ যুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট পূর্বে প্রশ্নের সেট কোড সচিবকে জানানো হবে। সেই অনুযায়ী কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বিধি অনুযায়ী খুলবেন।

জেলার ক্ষেত্রে ট্রেজারি এবং উপজেলার ক্ষেত্রে খানা প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক সংরক্ষণ করতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। কোনো প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক কোনোভাবে পরীক্ষায় বেআইনি কোনো কাজ করলে সে প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দোষী শিক্ষক ও কর্মচারী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তার এমপিও স্থগিত করা হবে। ট্রেজারি/থানা থেকে প্রশ্ন কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য দূরত্ব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করে প্রশ্নপত্র আনতে হবে।

দেশের বাইরে ৮ কেন্দ্র, পরীক্ষার্থী ৩৭৪ : চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেশের বাইরে ৮টি কেন্দ্র এবার মোট ৩৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে জেদ্দায় ৮৯ জন, রিয়াদে ৫১ জন, ত্রিপোলিতে ৪ জন, দোহায় ৭৭ জন, আবুধাবিতে ৪১ জন, দুবাইয়ে ২৭ জন, বাহরাইনে ৬৫ জন, সাহাম ওমানে ২০ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।

পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা (পরীক্ষার্থী, কক্ষ প্রত্যবেক্ষক, মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম, বোর্ডের পরিদর্শন টিম, জেলা ও উপজেলা পরিদর্শন টিম, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) ছাড়া অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।

শ্রুতিলেখক পাবেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীরা : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, প্রতিবারের মতো এবারও বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন পরীক্ষার্থী শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বাড়ানোসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *