ডেস্ক নিউজ:দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব।
এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবার বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা সহযোগিতাও শুরু হবে।
আর ইরানের পর এবার সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চলেছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া হচ্ছে তেহরানের দীর্ঘদিনের মিত্র এবং সৌদি আরবের এই পদক্ষেপের ফলে দামেস্ক ফের আরব-ব্লকে প্রত্যাবর্তন করতে পারে।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশকেরও বেশি আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এখন সিরিয়া ও সৌদি আরব আবারও তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে।
এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।
এছাড়া দামেস্কের সাথে সংযুক্ত একটি আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সাম্প্রতিক যুগান্তকারী এক চুক্তির পর রিয়াদ ও দামেস্কের মধ্যে যোগাযোগে ব্যাপক গতি পেয়েছে।
রয়টার্স বলছে, রিয়াদ এবং দামেস্কের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রেসিডেন্ট আসাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর পদক্ষেপের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে বিবেচিত হবে। কারণ ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে অনেক পশ্চিমা ও আরব রাষ্ট্র সিরিয়াকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেছিল।
দামেস্কের সাথে সংযুক্ত দ্বিতীয় একটি আঞ্চলিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে ‘ঈদ উল ফিতরের পরে নিজেদের দূতাবাস পুনরায় খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশের সরকার’।
এছাড়া আঞ্চলিক একটি সূত্র এবং উপসাগরীয় কূটনীতিকের মতে, সিরিয়ার একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে সৌদি আরবে আলোচনার ফলাফল হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরব সরকারের যোগাযোগ অফিস, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে সিরিয়া সরকারও মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সৌদির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিশ্চিত করেছে যে, সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে কনস্যুলার পরিষেবা পুনরায় চালু করার জন্য আলোচনা চলছে।
বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রগুলো এসব তথ্য সামনে এনেছে।
মূলত টানা ১১ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয়; সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে।
এক দশকের এই সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।
অবশ্য সংকটের শুরুতে সুন্নি নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব ও কাতারসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক মিত্র সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। তবে ইরান ও রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশজুড়ে বিদ্রোহকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, আসাদের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোর এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর কারণ হিসেবে ওয়াশিংটন সংঘাতের সময় আসাদ সরকারের বর্বরতার কথা উল্লেখ করেছে এবং সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে দেশটি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্রকে সিরিয়া ও সৌদির মধ্যকার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিককরণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
একইসঙ্গে অন্যান্য দেশকে আসাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যুক্তরাষ্ট্র উৎসাহিত করবে না’ বলেও জানান ওই মুখপাত্র।