রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ ঠাকুরগাঁও জেলার অর্থনীতিতে বড় একটি অংশ দখল করে আছে সুপারি। গাছে ফল আসার পর প্রতি বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে সুপারি পাঁকে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে এই সময়টাতে কোন সুপারি হয় না।

তাই এই সময় সারাদেশের পান-সুপারি রসিকদের অনেকটা চাহিদা মেটায় প্রায় ঠাকুরগাঁওয়ের সুপারি। দেশের বড় বড় অনেক সুপারি ব্যবসায়ীরা এখন অবস্থান করছেন ঠাকুরগাঁওয়ে। বিভিন্ন হাটে তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুপারি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এমন কি অনেক স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই পাঁকা সুপারি কিনে মজুদ করছেন। তারা এই সুপারি মাটিতে পুঁতে রাখবেন। মাস দু’য়েক পর তারা এই সুপারি মাটি থেকে তুলে মজা সুপারি হিসেবে অধিক দামে বিক্রয় করবেন।

এবার ঠাকুরগাঁওয়ে সুপারি বাগানে ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারে দাম বেশ ভাল। বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের হাট বাজারে প্রতি পন (৮০টি) সুপারি বিক্রয় হচ্ছে আকার ভেদে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত।পান রসিকদের জন্য রাজশাহীর পান আর ঠাকুরগাঁওয়ের সুপারি কদর রয়েছে আলাদাভাবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং মাটি বেলে দোঁআশ হওয়ায় বাড়ির আসে পাশে এমন কি বাড়ি আঙিনাই, সুপারি গাছ লাগিয়েছেন এখানকার মানুষরা।

এবং কিছু বাড়িতে সুপারির গাছ ছাড়াও অনেকে বাড়ির পাশের উঁচু জমিতে সুপারির বাগান করেছেন। সুপারি বাগানে আলাদা করে কোন পরিচর্যাও করতে হয়না। বাগান না হলেও প্রতিটি বাড়িতে কমবেশী সুপারির গাছ আছে। লাভজনক হওয়ায় অনেকে নতুন করে সুপারির বাগান করছে।

বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের গড়েয়া, সালান্দর, বালিয়া, জগন্নাথপুর, নারগুন,বেগুনবাড়ি, ইউনিয়ন সুপারির জন্য বিখ্যাত। এই এলাকায় রয়েছে অসংখ্য সুপারির বাগান। জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও সুপারির বাগান রয়েছে। উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বড় সুপারির কেনাবেচা হয় গড়েয়া বাজারে। সুপারির মৌসূমে প্রতি রবিবার ও বুধবার  হাটবারে  উঠে প্রচুর সুপারি। আর প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও জগন্নাথপুর খোচাবাড়ি বাজারে  এলাকায় বসে সুপারির হাট।

বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এখানকার সুপারি কিনে নিয়ে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাঁকা সুপারি কিনে মাটিতে পুতে রাখে মজানোর জন্য। মৌসূম শেষে মাটি থেকে তোলা মজা সুপারি কয়েক মাসের চাহিদা মেটায়। রংপুরের শঠিবাড়ির সুপারি (স্থানীয় ভাষায় বাংলা গুয়া) শেষ হওয়ার পর ঠাকুরগাঁওয়ের সুপারি বাজারে আসে। তাই দামও থাকে বেশ চড়া, এখন পাঁকা সুপারির পিক মৌসূম চলছে।

জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছেন আবাসিক হোটেলগুলোতে। তারা সকালে উঠে হাজির হচ্ছেন হাট বাজারে। তারা নিজেরা বা লোক দিয়ে সুপারি কিনছেন।

গত রবিবার দুপুরে জেলা শহরের গড়েয়া বাজার এলাকায় সুপারি হাটে দেখা গেছে এখানে প্রচুর সুপারির আমদানি হয়েছে।

গাছের পাঁকা সুপারি বস্তায় ভরে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে এসেছেন এখানে। সুপারি হাটি আসার বিভিন্ন রাস্তায় বসেছে অনেক ফড়িয়া ব্যবসায়ী। তারা বাজারে আসার বিভিন্ন রাস্তার ধারে অপেক্ষাকৃত কম দামে সুপারি কিনে বেলা শেষে কেনা সুপারি বেচতে আসে সুপারি হাটিতে। কারণ বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এখানে বসেই সুপারি কিনছেন। তবে বাগান মালিকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় সুপারির ফলন বেশি হয়েছে এবং দাম বেশি। এতে করে তারা লাভবান হচ্ছেন।

গড়েয়া এলাকার চকহলদী গ্রামের ফড়িয়া ব্যবসায়ী রুবেল রানা জানান, বাড়ি বাড়ি থেকে সুপারি ক্রয় করে বাজারে বিক্রয় করেছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *