সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রতারণা, জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে কারাগারে পাঠি য়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক, জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী শুনানী শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আসামী আবু সাঈদ সাতক্ষীরার আশাশুনী উপজেলার কচু য়া গ্রামের মৃত নূরুল ইসলাম সরদারের ছেলে। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল মধু মল্লারডাঙি এলাকায় বসবাস করেন।
এর আগে গত ৩০ অক্টোবর এ মামলায় অপর তিন আসামি, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএ ম আবু রায়হান, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নাসির আহ ম্মেদ এবং হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক অরুন কুমার সরকারকে কারাগারে পাঠিয়েছিল আদালত। দুদকের প্যানেল আইন জনীবী অ্যাড. সাধন চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চার প্রভাষককে এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস ২০২২ সালের ৯ মার্চ খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় মামলা (৩/২ ০২২) দায়ের করেন। যা পরবর্তীতে সাতক্ষীরা বিশেষ আদা লতে ২/২০২২নং মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের খুলনা অফিসের সহ কারী পরিচালক বিজন কুমার রায় চলতি বছরের ৫ মে আ দালতে মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২৬ অক্টোবর দুদকের দাখিলকৃত অভি যোগপত্র গ্রহণ করে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অংকের আর্থিক
সুবিধা নিয়ে রেজুলেশন জালিয়াতি করে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ ও ২১জন শিক্ষককে এম পিওভুক্ত করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট তদন্ত শুরু করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারীপরিচালক প্রবীর কুমার দাস।
২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সাবেক অধ্য ক্ষই মদাদুল হক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবে ক অধ্যক্ষ সুকুমার দাসে রনি কট থেকে দুদক সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দুর্নীতি সম্প র্কেবি ভিন্ন তথ্য অবগত হন।
অভিযুক্ত ২১জন প্রভাষক ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে২ ০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফা য়দু দক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নেওয়া হয় তাদের লিখিতজ বানবন্দি।
পরবর্তীতে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোঃ মনিরুল ইসলাম,দ র্শন বিভা গের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষকএসএম আবু রায়হান এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুনকু মার সরকারের কাগজপত্র জাল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।
২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দুদকের হটলাইনে সিটি কলেজের এমপিও বঞ্চিত এবং কলেজ থেকে নিয়মবহির্ভুতভাবে বিতাড়িত বিধান চন্দ্র দাসসহ অন্যান্যদের অভিযোগের পর ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারির পর থেকে এসকল শিক্ষককে তদন্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি হতে হয়।
মামলায় আরো উলে-খ করা হয়, ব্যান বেইস এর তথ্য অনু সারে মোঃ মনিরুল ইসলামের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর। এসএম আবু রায়হানের যোগ দানের তারিখ ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ। মোঃ নাসির আহম্মেদ এর প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১৬ সালের পহেলা ডিসে ম্বর ও অরুন কুমার সরকারের যোগদানের তারিখ ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। এইসব শিক্ষকদের যোগাদানের তারিখ
জালিয়াতি করে মনিরুল ইসলাম ও অরুন কুমার সরকারের যোগদান ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর, এসমএম আবু রায়হান ও নাসির আহম্মেদ এর যোগদান দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর।
অধ্যক্ষ আবু সাঈদের যোগসাজশে ওই চারজন শিক্ষক ২০১৯ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বেতন ভাতা বাবদ ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা রূপালী ব্যাংক সাতক্ষীরা কর্পোরেট শাখা থেকে উত্তো লন করে আত্মসাৎ করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, বর্তমানে আরও ১২জন শিক্ষকের ত থ্য জালিয়াতি করে এমপিওযোগ্য নামের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই দুদ কের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা তাদেরকে ডেকে নিয়োগ সংক্রান্ত সকল তথ্যউপাত্ত রেকর্ড করেন।
এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদার্থ বিজ্ঞান বিভা গের প্রভাষক আজিম খান শুভসহ চারজনের নামে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তাদের নি য়োগ সংক্রান্ত জটিলতা ও বেতন ভাতা গ্রহণের পরিমান জানতে চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতি ষ্ঠানে পিয়ন, নাইট গার্ড থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১০লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা ভাগবা টোয়া রার এক অলিখিত সিস্টেম গড়ে উঠেছে।
আর এই সিস্টেমের বলি হয়ে বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকুরি করে বহু ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে পথে বসেছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ব্যবসার টাকার বড় অংশ চল গেছে স্থানীয় এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধির পকেটে। সাতক্ষীরার অধি কাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়ে ছে।