এঘটনায় উভয় পক্ষের ৬ জন গুরুতরভাবে জখম হয়েছে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তারা রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান এমপি অনুসারী হিসেবে পরিচিত আমজাদ বাহিনী প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
এঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনার পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিন ৬ ডিসেম্বর বুধবার সকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ছে।
জানা গেছে, এই গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেই সহিং সতা শুরু হয়েছে। ক্ষমতার পালাবদল হলেই রক্তক্ষয়ী সংঘ র্ষে জড়িয়ে পড়ে সিন্দুরী গ্রামের দুটি পক্ষ।
এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন এমপি অনুসারী হিসেবে পরি চিত আমজাদ হোসেন। অপর পক্ষে রয়েছেন কৃষক নেতা হবিবুর রহমান হবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় একযুগ ধরেই দুই পক্ষের মাঝে এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। দুই পক্ষের মধ্যে আবার আত্মী য়তার সম্পর্কও রয়েছে।
গ্রামে ১০টি খাস পুকুর রয়েছে। মুলত পুকুরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই বিরোধের সুত্রপাত। এদিকে ১০টি পুকুরের মধ্যে আমজা দের দখলে ৭টি ও হবিবুরের দখলে রয়েছে একটি।
এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আমজাদ হোসেন জানান, তারা সরকারের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে সাত টি পুকুর ইজারা নিয়েছেন।
তারা এই পুকুর করে পার্টির ছেলেদের হাত খরচ দেন, মস জিদে দেন গরিব মানুষের বিয়ে সাদিতে খরচ দেন। আর সবচেয়ে ভালো পুকুরটি হবিবুরের লোকজনকে ছাড় দিয়েছেন।
তারপরেও গত বছর হবির লোকজন তার একটি পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। এই খাস পুকুর থেকে পানি দেও য়াকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা আজীবন আওয়ামী লীগ করেন। নৌকার ভোট দেন। গত দুইবার আয়েন উদ্দিন নৌকা প্রতীক পেয়েছি লেন। তারা আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, এবার আসাদুজ্জামান (রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) নৌকা পেয়ে ছেন। এবার তারা তার পক্ষে কাজ করছেন।
তারা সব সময় নৌকার পক্ষে থাকেন। তার মতে হবিবুরের পক্ষে চার-পাঁচজন ছাড়া সব বিএনপির লোক।
তাদের হাম লায় তার চাচা নহির (৭০), চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম, ভাগ্নে লতিফ ও আত্মীয় মুরাদ এখন রাজশাহী মেডি কেল কলেজ হাসপা তালে রয়েছেন।
এর মধ্যে নহির এখন মৃত্যু শয্যায়। তার একটি হাতও ভেঙে গেছে।
প্রতক্ষ্যদর্শী সুত্রে জানা গেছে , গত সোমবার রাতে গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় একটি চায়ের দোকানে হবিবুর পক্ষের লোক শামীম (৩৬) নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছিলেন।
এসময় আমজাদের চাচাত ভাই সাইফুল বাধা দিয়ে এলাকার লোক হিসেবে এমপি আয়েন উদ্দিনের পক্ষে ভোট করতে চাপদেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়।
এতে উভয় পক্ষের শামীম (৩৫) ও সাই ফুল ইসলাম ( ৪২) আহত হন। সাইফুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শামীমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এই ঘটনার জের ধরে বুধবার সকালে আমজাদের পক্ষের লোকজন হবিবুর পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা করেন।
এতে আমজাদ পক্ষের আব্দুল লতিফ (৭০) চাচা নহির উদ্দি ন (৭০) ও পাশে র সইপাড়া গ্রামের আত্মীয় মুরাদ (৪০) আহ ত হন। অন্যদিকে হবিবুর পক্ষের এরশাদ (৪০) ও মুরাদ (৩০) আহত হন।
এদের সবাইকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাস পা তালে ভর্তি করা হয়েছে।
এমপি অনুসারী আমজাদের লোক জন হামলা করে হবিবুর অনুসারীর বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করেছে।
এই ঘটনা নিয়ে বুধবার বিকেলে রাজশাহী-৩ আস নের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামানের নির্বাচন পরিচা লনা কমি টির সদস্য মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনি য়নের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এনামুল হক সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েন উদ্দিনের লোক দিদার হোসেন ওরফে ভুলুর ইন্ধনে আমজাদ বাহিনী হবিবুরের লো কজনকে মারপিট ও বাড়ি-ঘরে হামলা করেছেন।
এ বিষয়ে সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, খাসপুকুর নিয়ে আমজাদ ও হবিবুরদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের।
তিনি কয়েকবার মীমাংসাও করে দিয়েছেন। তবে এখন তিনি এসবের কিছুই জানেন না। তারা দু পক্ষই তার লোক বলে দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।
এবিষয়ে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হরিদাস মন্ডল বলেন, খাস পুকুর নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব অনেক দিনে র। যে কোনো ইস্যুতেই তারা বিভক্ত হয়ে মারামারি করে।
এটা রাজনৈতিক কোনো ঘটনা না।
এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়েই তাদের এই মারামারি। বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা দিতে আসেনি।#