চুয়াডাঙ্গা থেকে আকিমুল ইসলাম ;
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘গোশত সমিতি’।
কসাইদের নানা অনিয়মের কারণে সমিতির মাধ্যমে টাকা সঞ্চয় করে, পশু কিনে গোশতের চাহিদা পূরণ করে এলাকার সাধারণ মানুষ।
সেহরি খাওয়ার পরই শুরু হয় গরু জবেহ। আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পাড়া-মহল্লা। রাস্তার পাশে দেখা যায় মানুষের জট লা।
জায়গায় জায়গায় সাজানো থাকে গোশতের পসরা। এভাবে গরু কিনে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে কম দামে গোশত ভাগাভাগিকরে নিয়ে অনেক খুশি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
জানা যায়, গ্রামের পাড়া মহল্লায় নিম্ন আয়ের বেশ কয়েকজ ন মিলে একটি সমিতি বা সংগঠন তৈরি করে। যার নাম দেও য়া হয় ‘গোশত সমিতি’।
অনেকের কাছে আবার ‘মাংশ খাই সমিতি’ বা ‘গোশত খাও য়া সমিতি’ নামেও পরিচিত। সমিতির সকল সদস্য মিলে সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা করে। বছর শেষে ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, ইসলামী জা লসা এবং গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে সেই সমিতির মাধ্যমে জমাকৃত টাকায় গরু কিনে গোশত ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। এতে গোশতের দাম বাজারের তুলনায় অনেক কম হয়। কম দামে ভেজালমুক্ত গোশত পেয়ে সমিতির সকল সদস্যদের মুখে দেখা যায় হাসির ঝিলিক।
অনেকের কাছেই গোশত সমিতি বা মাংশ খাই সমিতি শব্দটি নতুন মনে হলেও, সাধারণ লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ সমিতি। বাজারে গরুর গোশতের দাম বেশি হও য়ায় মূলত এই সমিতির সৃষ্টি হয়েছে।
লোকজন এ সমিতি থেকে উপকৃত হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও জীবননগর  উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে গোশত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জনা য়ায়, তারা সমিতিতে সাপ্তাহিক অথবা মাসি ক হারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। এভাবে জমাকৃত টাকায় কেনা হয় গরু।
ঈদের দু-একদিন আগে ক্রয়কৃত পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্য তা ভাগ করে নেন।
এতে ঈদ উদযাপনে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবার বাড়িতে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়। সাধারণত এই সমিতিতে ৩০ থেকে ৭০ জন সদস্য হয়ে থাকে।
চুয়াডাংগার জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর মাঝের পাড়ার শাহাজামাল  জানান, সংসারে তার নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা নিয়ে একত্রে ঈদে উদ যাপন করতে অতিরিক্ত খরচ হয়। ঈদে গরুর গোশতের চাহি দা সবারই থাকে। কিন্তু দিনমজুরের কাজ করে একসঙ্গে অনেক টাকায় গোশত কেনা তার জন্য কষ্টসাধ্য। গত বছর সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে এ বছর সমিতির সদস্য হয়েছেন।
একই মহল্লার গোশত সমিতির উদ্যোক্তা  আবুল হোসেন চান্দু, আব্দুল মালেক, মো. নাসির মাস্টার জানান, তারা প্রায় সাত বছর ধরে গোশত সমিতি তত্ত্বাবধান করছেন। এবছর তাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫৫ জন।
সদস্যরা দৈনিক ১০ টাকা হারে মাসে ৩০০ টাকা করে জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদের আগে সবার জমাকৃত টাকায় গরু কিনে সমহারে বন্টন করা হয়। তাদের গ্রামে এরকম প্রায় বেশ কটি সমিতি আছে।
এ বছর তারা ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনে গোশত বণ্টন করেছেন। প্রতি কেজি গোশতের দাম পড়েছে ৫৯০ টাকা। বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং একই সঙ্গে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে সবাই খুশি।
One thought on “গোশত সমিতি ব্যপক সাড়া ফেলেছে চুয়াডাঙ্গার পাড়া মহল্লায়”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *