আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ক্রমে ভিত্তিক জয়িতা বাছাই কাজটি পরিচালিত হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ততা নিয়ে একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা।
নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক হল জয়িতা।
কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতা কে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমা জে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন।
সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এই জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। উদ্যোগটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’। জয়িতাদের পাঁচটি ক্যাটাগ রিতে ভাগ করা হয়েছে।
পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঁচজন জয়িতাকে আনুষ্ঠা নিক ভাবে সম্মাননা প্রদান করার কথা থাকলেও ঝিকর গাছায় পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জীবন বৃত্তান্ত সহ নামের তালিকা চাওয়া হলে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শি ক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল জন নী নারী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছেন যে নারী ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটাগ রিতে সর্বমোট ৪টি আবেদন জমা পরে।
প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্তগুলো পর্যালোচনা করে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ এর ঝিকর গাছায় চার ক্যাটাগরিতে জয়িতা নির্বাচন করেন ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি।
যার মধ্যে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটাগরীতে কৃষ্ণনগর গ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ার ম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম রবি উল ইসলামের মেয়ে বর্তমান উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লুবনা তাক্ষী (৪৫)। তিনি বলেন, জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি।
তখন থেকেই মানুষের প্রতি কাজ করা দায়িত্ব আমার অনেক বেড়ে যায়। সমস্ত প্রতিকূলতা ও বাধা পেরিয়ে মানুষের পাশে থাকার জন্য আমি আমার সর্বস্ব চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা সরকারের যে মূলমন্ত্র “নারীর ক্ষমতায়ন” সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
বাল্যবিবাহ রোধে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় সচেতন মূলক প্রোগ্রাম করছি।
কোন শিক্ষার্থী যেন মাদকাসক্ত না হয়, তারা যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিবার সমাজের এবং দেশের জন্য কাজ কর তে পারে সেজন্য আমি সব সময় চেষ্টা করছি।
করোনাকালীন সময়ে আমি সরকারি ভাবে এবং ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
এছাড়াও আমি সব সময় চেষ্টা করছি সত্যিকারের মানুষ হতে এবং যতটুকু পারি ততটুকু মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
সফল জননী নারী ক্যাটাগরীতে কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত নিশি কান্ত রায়ের স্ত্রী বন্দনা রায় (৫৫)। তিনি বলেন, আমার শ্বশুর বাড়ির আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো ছিল না।
বাজারে আমার স্বামীর একটা ছোটখাটো মিষ্টির দোকান ছিল।
আমার ৩টা মেয়ে সন্তান রেখে হঠাৎ করে আমার স্বামী র মৃত্যু হয়। তারপর স্বামীর দোকান আমাকে দেখভাল করতে হয়।
এরপর মিষ্টির ব্যবসা করে মেয়েদের লেখাপড়া, থাকা খাওয়ার খরচ ও স্বামীর ব্যবসায়ের রেখে যাওয়া
ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ১বছরপর তার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যায়, মেজো
মেয়ের মেডিকেল পড়াার শেষ হলে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দেন ও ছোট মেয়েকে ঢাকার প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে ফার্মে সি বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স পড়া সম্পন্ন করিয়ে ছেন।
বর্তমানেও সে নিজের জীবন অতিবাহিত করার জন্য এখনো সংগ্রাম করে চলেছে।
বর্তমানে তার বড় মেয়ে মাষ্টার্স পাশ করে সফল উদ্যোক্তা, মেজো মেয়ে পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার সহকারী মেডিকেল অফিসার ও ছোট মেয়ে মাস্টার্স পড়া সম্পন্ন হয়েছে।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছে যে নারী ক্যাটাগরীতে কামারপাড়া গ্রামের যোষেফ পদো মন্ডলের মেয়ে লুচিয়া বিশ্বাস (৪৬)।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর একটি আয়রণ লন্ড্রির দোকান ছিলো। স্বামী শাশুড়ি এবং দুই সন্তানকে নিয়ে চলছিলো আমার সংসার।
দুই সন্তানের মধ্যে একটি সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ২০০০ সালে র বন্যা আসলে আমাদের দোকান থেকে মালামাল চুরি হয়ে যায়। তারপর আমার স্বামী একটি এনজিও সংস্থায় পিয়নের চাকরী নেন।
১বছর পর পদোন্নতি নিয়ে জুটের তৈরী সেলায় সেন্টারের ইনচার্জ হয়। পরবর্তীতে ওই সেন্টারের একটি মহিলার সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়।
একপর্যায়ে তার চাকরী চলে যায়। আমার স্বামীর তার ২য় স্ত্রী নিয়ে পৃথক স্থানে থাকার ফলে আমি কোনো উপায় না পেয়ে খেজুর পাতার ও খড়ের তৈরীর হাতের কাজ করতে শুরু করি।
অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে পদ্মপুকুর গ্রামের মৃত ইসহাক মোড়লের মেয়ে আলেয়া খাতুন (৭৫)। তিনি বলেন, পিতার অভাবের সংসারের চাপে ১২বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ৫সন্তানের জননী হওয়ার পরে স্বামীর মৃত্যু হয়।
তখন থেকে শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। মাঠে দিনমজুরের কাজ, পরের বাসার কাজ ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ সহ পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে কোন ভাবে জীবন চলতো।
তারপর একটি সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভার্মী কম্পো স্ট সার তৈরী করা শুরু করি। প্রথমে সার কম বিক্রয় হলেও ধীরে ধীরে তার চাহিদা বৃদ্ধি হতে থাকে।
এই সার মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই উপযোগী এবং নিরাপদ ফসল উৎপাদনে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
যার ফলে বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিস আমার নিকট থেকে এখন সার নিয়ে কৃষকের মাঝে বিতরণ করে।
বর্তমানে আমি অর্থনৈতিক ভাবে সফল ও স্বচ্ছল।
উপজেলার মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহিলা বিষয়ক অফিসার অনিতা মল্লিক বলেন, জয়িতারা হল বাংলাদেশের বাতিঘর।
জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। তা হলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। আর বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।