স্টাফ রিপোর্টার, পুঠিয়া (রাজশাহী) ঃ সমাজের সবিধা বঞ্চিত ও পিছিয়ে পাড়া ছিন্নমূল শিশুদের কাছে স্কুল শব্দটিই যেন একটি স্বপ্ন।

পুঠিয়া উপজেলা পূর্ব বারইপাড়া গ্রামে দীর্ঘ ৫০ বছর প্রতীক্ষা র পর সেই স্বপ্ন পূরণ করলো হযরত আনা স (রা.) নূরানী এন্ড কিন্ডারগার্টেরন স্কুল।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিখ্যাত সাহাবি ও বিশেষ খাদেম ছিলেন। তাঁর নাম অনুসাওে কিন্ডার গার্টেনের নাম করণ করা হয়।

জানাগেছে, পুঠিয়া, চারঘাট,নাটোর সদর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার প্রান্তিক গ্রাম পূর্ব-বারইপাড়া, সর্দারপাড়া, জয়রামপুর, পাইকপাড়া ও কারিগর পাড়া।

এই গ্রামগুলো হোজা নদীর তীরে অবস্থিত। গ্রামের অধি কাংশ লোকজন নি:স্ব, ভূমিহীন ও শিক্ষা বঞ্চিত।

গ্রামগুলোর ৩ থেকে ৪ কি.মি এর মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। নদীর তীরবর্তী গ্রাম হওয়ায় অত্র অঞ্চলে মাদকের অভ য়াশ্রম গড়ে উঠেছে।

গ্রামের যে কয়েকটি শিক্ষিত পরিবার আছে, তাদের দীর্ঘদি নের দাবি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

দীর্ঘদিন থেকে গ্রামবাসী জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাস নের কাছে নানাভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আবে দন করে আসছে।

অবশেষে ২০২১ সালের আগস্ট মাস দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। ছোট পরিসরে ১৫ থেকে ২০ জন শিশুকে নিয়ে পড়া নো শুরু করা হয় তালুকদার গ্রামের মসজিদে।

২০২২ সালে প্রায় ১৫০ জন শিশু তালুকদার গ্রামের মসজিদে পড়তে আসে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এলাকাবাসীর প্রবল চাহিদা ও আ বেদন থাকায় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও
উপজেলা প্রশাসন এবং পুঠিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়া রম্যান লোকাল ফান্ড থেকে আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে একটি নূরানী এন্ড কিন্ডারগার্টেন স্কুলের একাডেমিক ভবন তৈরি করা হয়।

এছাড়াও, একাডেমিক ভবনটি নির্মাণে অনেক দানশীল ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছায় দান করেছেন।

একাডেমিক ভবনটি চলতি বছরের ০৬ মে তারিখে এলাকা বাসীর উপস্থিতিতে উদ্ধোধন করেন।

উদ্বোধনের পর প্রায় দুই শতাধিক শিশু তালুকদার গ্রামের নূরানী এন্ড কিন্ডা রগার্টেন স্কুলে পড়াশুনার জন্য ভর্তি হয়। তালুকদার গ্রাম আশ্রয়ণের বাসিন্দা ফারুক বলেন, আমার

ছেলে ইব্রাহিম অত্র বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। তালুক দার গ্রামে প্রতিষ্ঠানটি হওয়ায় গ্রামের মান বেড়েছে।

বাচ্চাদের আচার-আচারণে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বাচ্চারা সামাজিকতা শিখছে। পূর্ব বারইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন বাবু বলেন, আমার মেয়ে মোছাঃ ফারহানা অত্র বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণিতে পড়ে।

এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান অনেক ভাল। আমরা খুশি। আমাদের মনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা নূর আলম বলেন, আমার ছেলে জোবায়ের হোসেন অত্র বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণিতে পড়ে।

অত্র প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় শিক্ষা ও স্কুলের একাডেমিক শিক্ষা দিয়ে আমার সন্তানকে গড়ে তুলছে। বাড়ির কাছে স্কুল পেয়েছি।

এর চাইতে আনন্দের কি হতে পারে। অত্র কিন্ডারগার্টেন এর প্রধান শিক্ষক জনাব মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা ও গ্রামবাসী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। আমরাও অনেকের ‍দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।

তালুকদার গ্রামের হযরত আনাস (রাঃ) নূরানী এন্ড কিন্ডার গার্টেন আমাদের ও আমাদের পূর্ব পুরুষদের আকাঙ্খার প্রতিফলন। দীর্ঘ ৫০ বছর প্রতীক্ষার পর আমাদের গ্রামে শিক্ষার আলো পৌছালো।

অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি, সাবেক অধ্যক্ষ, লস্করপুর মহাবিদ্যানিকেতন নাসির উদ্দিন প্রাং, বলেন, ‘অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা ও স্কুলের একাডেমিক শিক্ষার সুসমন্বয় রয়েছে।

আমরা আমাদের শিক্ষকগণকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হযরত আনাস (রাঃ) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিখ্যাত সাহাবী ও ১০ বছরের খাদেম ছিলেন।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিগণ মাদ্রাসা ও স্কুলের নাম হিসেবে অত্র নামটি পছন্দ করেছেন। ভবিষ্যতে অত্র
প্রতিষ্ঠানকে দাখিল/ এস.এস.সি পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *