রাকিব হাসান ,মাদারীপুর :মাদারীপুরে নিত্যপ্রজননীয় পন্যের চেয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলছে ওষুধের দাম।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়লে সামাজিক যোগাযোগ ফেইসবুক ও গণমাধ্যমে ব্যাপ ক আলোচনা ও সমালোচনা ঝর বইলে  ওষুধের ক্ষেত্রে নেই যেন কোন ব্যতিক্রম। একটু একটু করে নাগালের বাইরে চলে গেছে ওষুধ কেনার সামর্থ্য।
যেন-তেন কোম্পানির চেয়ে নামীদামি ওষুধ কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ছোটখাট ফার্মেসি থেকে শুরু করে মাদারীপুর শহরের বড় বড় ফার্মেসিতে জ্বর-ঠান্ডা থেকে শুরু করে প্রেসার, ভিটামিন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রায় ওষুধের দামে একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে না বাড়ছে মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করা ওষুধের দাম তার চেয়ে বেশি বাড়ছে। বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ওষুধের বাড়তি দামের কথার এমনই ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।
কোন কোন ওষুধের দাম বাড়ছে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কালীগঞ্জ বাজারের তসলিমা ফার্মেসির মালিক মোঃ তসলিম সরদার  বলেন, ধান, চাল, সবজির চেয়ে ওষুধের দাম ইচ্ছামতো বাড়াচ্ছে কোম্পানি। করোনার পর থেকেই এভাবে কয়েক মাস যেতে না যেতে বেড়েই যাচ্ছে ওষুধের দাম। রোগীরা খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। আমাদের কি করার ঔষধের দাম কোম্পানি বাড়াইলে আমাদের তো সেই অনুসারে দাম রাখতে হয়।
এ ব্যাপারে  জিসান ফার্মেসির আব্দুর বাতেন মোল্লা বলেন, কয়েক মাস পর পরই বিভিন্ন ওষুধের দাম বাড়ছে। দেখা গেছে আগের লটের ওষুধ শেষ না হতেই নতুন করে বাড়তি দামের ওষুধ বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।এতে আমাদেরও ব্যবসা করতে কষ্ট হয়। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে ঔষধের দাম চলে গেছে।দাম বেড়ে  কারণে মানুষ এখন ঔষধ কিনতে ভয় পায়।
ওয়াজেদ আলী  নামে এক ক্রেতা বলেন, আগে তিন চার পাতা ওষুধ কিনতে ৩০০ টাকা লাগত। বর্তমানে ৪০০ টাকা তেও পাওয়া যায় না।
এতো বেশি দাম কেন? কি হয়েছে যে ওষুধের দাম এত বেশি বাড়ছে? এটা কি দেখার কেউ নেই?প্রতিটা ক্ষেত্রেই যদি বা জার মনিটরিং থাকত তাহলে ঔষধের দাম এভাবে বাড়তে পারতো না।
কামাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, এখন ওষুধ কিনতে গেলেই এক হাজার টাকা ছাড়া ওষুধ মিলে না। আগে ৩০০ টাকায় অনেক ওষুধ পাইতাম। এখন ১০০০ টাকায় তার কিছুই পাওয়া যায় না।
এভাবে যদিও ওষুধের দাম বাড়ে তাহলে আমাদের মতো গরিব মানুষের অসুখ হলে চিকিৎসা করার পরে ওষুধ আর কিনতে পারবো না। এরকম যদি হয় তাহলে আমাদের রোগ নিয়ে মরে যেতে হবে।
শুধু এই ফার্মেসিতে নয়, মাদারীপুর  হাসপাতালের সামনে আলিফ ফার্মেসিসহ অন্যান্য ফার্মেসির বিক্রেতাদেরও অভিযোগ করোনার পর থেকে ওষুধের দাম বাড়ছেই। কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে।
 ডাসার এলাকার লিমন রায় বলেন,আগে একটা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের দাম দুই টাকা দিয়া কিনতাম,  এখন সেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনতে হয় ১০ টাকা দিয়ে। ঔষধের দাম বাড়ে তাহলে আমাদের মত লোক ঔষধ কিনে আর রোগমুক্তি করতে পারবে না। সরকারের কাছে জোর দাবি দামগুলো পূর্ণ আবার নির্ধারণ করা হোক। যাতে আমরা ওষুধ কিনে এ রোগ থেকে বাঁচতে পারি।
বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রেসারের (উচ্চ রক্তচাপ) ওষুধের দাম খুবই বেড়েছে। ওসারটিলের দাম আগে ছিল ৮০ টাকা পাতা, বর্তমানে ১০০ টাকা হয়ে গেছে। এভাবে ৮০ টাকার নজেলক ১০০ টাকা, ৬০ টাকার লোসা রভা ৮০ টাকা, ৬০ টাকার ফিক্সকার্ড ৮০ টাকা, ৯৮ টাকার সিলডিপ-৫ হয়েছে ১১২ টাকা, ১২৬ টাকার সিলডিপ-১০ হয়েছে ১৪০ টাকা।
এক পাতা বিসলল (৫ এমজি) ট্যাবলেট ১৩০ থেকে ১৬০টা হয়েছে। এভাবে অরবাপিনসহ প্রেসারের প্রায় সব ওষুধের দাম ব্যাঙের ছাতার মতো প্রতিনিয়ত লাফিয়ে বেড়েই যাচ্ছে।
অধিকাংশ মানুষের গ্যাস্ট্রিকের জন্য ওষুধের দরকার হয়। দাম বাড়ার দিক থেকে পিছিয়ে নেই। প্রতি পিস ফিনিক্স (২০ এমজি) ট্যাবলেট ৫ থেকে ৭ টাকা, ওমিডন (১০ এমজি) ট্যাবলেট ৩ থেকে ৪ টাকা, ৫ টাকার ওমেফ ৬ টাকা ও ৬ টাকার প্যান্টোনিক্স ৭ টাকা হয়েছে।
ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় ন্যাপ্রোসিন প্লাস ২০ এমজি+ ৩৭৫ এমজি ট্যাবলেট ১৬ টাকা থেকে ২০ টাকা হয়েছে।
বিক্রেতারা বলেন, ক্যালসিয়ামের দামও বহুগুণ বেড়ে গেছে। আগে ২১০ টাকা ক্যালবোডি বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ২৪০ টাকা, ২৪০ টাকার রেনোভিট হয়ে গেছে ২৭০ টাকা, ২৪০ টাকার বোস্ট ২৭০ টাকা, ৩০০ টাকার ক্যালবোরাল-ডি ৩৩০ টাকা হয়ে গেছে।
ক্যালসিয়ামের এক কৌটা নিউরো-বি ট্যাবলেটের দাম ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা হয়েছে। এসব ওষুধের কমিশনও কম। তাই লাভও কম হচ্ছে।
এদিকে ক্রেতারা বিভিন্ন ঔষধ কিনতে এসে প্রকাশ করে যায়। কিন্তু আমরা কি করব, আমরা যদি ক্রেতাদের দুই একটু টাকায় কম দিতে পারি, তাহলে আমরা আশা করি আগামীতে ক্রেতারা আমাদের কাছে আসবে কিন্তু আমরা তা করতে পারতেছি না।
ফার্মেসি মালিকরা আরও জানান, অপারেশনের পর পরই অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়। এই ওষুধের দামও লাগামহীন হয়ে পড়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেফোটিল প্লাস (৫০০ এমজি) ৫০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা পিস হয়ে গেছে।
৫০ টাকার সেকোক্লাব ৬০ টাকা, ৩৫ টাকার অ্যাজি থ্রোমা ইসিন ৪৫ টাকা, ৩৫ টাকা জিম্যাক্স ৪০ টাকা, ৫০ টাকা সেফথ্রি ৬০ টাকা পিস হয়ে গেছে। মক্সাসিলিন (১০০ মিলি) সিরাপ ৪৭ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, শিশুদের নাকের অ্যান্টাজল ০০. ৫% ড্রপ ১১ থেকে ১৯ টাকা ও প্রাপ্তবয়স্কদের নাকের অ্যান্টাজল ০.১% ড্রপ ১১ থেকে ২০ টাকা করা হয়েছে।
আমাশয় রোগীদের পেটের সমস্যায় ব্যবহৃত প্রতি পিস প্রোবায়ো ক্যাপসুল ১৪ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিসের জন্য প্রতি পিস কমপ্রিট (৪০ এমজি) ট্যাবলেট ৭ থেকে ৮ টাকা হয়েছে। কাশির তুসকা প্লাস (১০০ মিলি) সিরাপ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং ফেক্সো (৫০ মিলি) সিরাপ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা করা হয়েছে।
জ্বর, ব্যথার জন্য অতি সাধারণ নাম নাপার দামও ১০ থেকে ১২ টাকা পাতা হয়ে গেছে। এ ছাড়া শিশুদের জ্বরের চিকি ৎসায় ব্যবহৃত নাপা ড্রপ ১৫ থেকে ২০ টাকা করা হয়েছে। নাপা সিরাপ (৬০ মিলি) ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা হয়েছে।
এ ছাড়া এলার্জির প্রতি পিস ফেনাডিন (১২০ এমজি) ট্যাবলেট ৮ থেকে ৯ টাকা করা হয়েছে। শিশুদের জিংক সিরাপ (১০০ মিলি) ৩৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা ও শিশুদের পেটফাপা ও হজমশক্তির চিকিৎসায় ব্যবহৃত নও-নেহাল সিরাপ ৬০ টাকা ৭৫ টাকা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় মোনাস ১০ ট্যাবলেট ১২ টাকা থেকে ১৬ টাকা হয়েছে। ২০০ এমজির ডপজিবা ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পাতা, ৪০০ এমজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা হয়ে গেছে। একইভাবে ডকোপার দামও ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা ও ৮০ থেকে ১২০ টাকা হয়ে গেছে।
শুধু ওষুধের দামই নয় জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব ও পেসমে কারসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইসের দামও অনেক বেড়ে গেছে।দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ জনতা।
মাদারীপুর ভোক্তা অধিদপ্তরের  সহকারী পরিচালক জান্নাতু ল ফেরদাউস বলেন,ঔষধ কোম্পানি যদি দাম বাড়ায় সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।
এমনিতেই যদি ওষুধের গায়ে যে দাম থাকে এরচেয়ে বেশি দাম রাখলে সেক্ষেত্রে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।যদি নির্দিষ্ট দামের চেয়ে যদি কেউ দাম বেশি রাখে তাকে অবশ্যই জরিমানা হতে আনা হবে।
দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অঃ দাঃ) মোহাম্মাদ বাদল শিকদার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ১১৭টি ওষুধের এম আরপি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে ওষুধ কোম্পানি দাম বৃদ্ধির জন্য আবেদন করলে ৫৩টি পণ্যের দাম বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *