আলিফ হোসেন,তানোরঃ
জমিদারি শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে বহুকাল আগেই।
জমিদারি শাসন ব্যবস্থায় কৃষক শোষণের কথা শোনা গে লেও, সেরকম চিত্রই যেন শত বছর পর মিলল তানোরের মাঠে মাঠে।
সেচের কাজে নিয়োজিত গভীর নলকূপ অপারেটররা জমি দারের উমেদারের ভূমিকায় যেনো অবতীর্ণ হয়েছে।
তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে উপজেলার হাজার হাজার।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) আড়াদীঘি মাঠের অপারেটরগণ স্বঘোষিত(ওয়ার্টার লড) জল জমিদার।
এখানে অপারেটরদের কথায় আইন। এখানে জমি কৃষকের রাজত্ব অপারেটরের।
আড়াদীঘি মাঠের জেল নম্বর ২৩৩ ও ৩৬২ নম্বর দাগে অবস্থিত গভীর নলকুপের অপারেটর রুস্তম আলী।
তিনি নিজের ইচ্ছেমতো সেচ চার্জ আদায় করছেন।
অপরদিকে একই মাঠে আরো দুটি গভীর নলকুপের অপা রেটর হাবিবুর রহমান ও শাফিউল ইসলাম স্বঘোষিত নিয়মে সেচ চার্জ আদায় করছেন।
যেখানে প্রতি বিঘা আলুখেতে সেচ খরচ সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা, সেখানে অপারেটর আদায় করছে দু’হাজার থেকে ২২শ’ টা কা।
স্থানীয় কৃষকেরা দীর্ঘদিন যাবত কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগ ও সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকুপ পরিচা লনার দাবি করে আসছেন।
এদিকে সেচ নিয়ে কৃষকের দুর্ভোগের বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর নজরে আসে। তিনি সমি তির মাধ্যমে গভীর নলকুপ পরিচালনার কঠোর নির্দে শনা দিয়েছেন।
বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলীর উপস্থি তিতে স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে ১৫ থেকে ২০ সদস্যর কমিটি গঠন করতে বলা হয়।
কমিটি গভীর নলকুপ পরিচালনা করবেন এবং অপারেটর সমিতির একজন কর্মচারী হিসেবে কাজ করবেন।
কিন্ত্ত এখানো এসব গভীর নলকুপে সমিতি গঠন করা হয়নি।
স্থানীয় সাংসদের নির্দেশনাও তারা আমলে নিচ্ছেন না, এতে প্রশ্ন উঠেছে তাদের খুঁটর জোর কোথায় ?
জানা গেছে, বিগত ২০২২ সালের মার্চে সেচ না পেয়ে  গোদা গাড়ি উপজেলায়  দুজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।
চলতি আলু ও বোরো মৌসুমে  বিভিন্ন এলাকায় গভীর নল কূপ অপারেটররা কৃষকদের জিম্মি করে সেচের চার্জ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।
গভীর নলকূপ অপারে টরদের বেপরোয়া সেচ বাণিজ্যের কবলে পড়ে  কৃষকদের অবস্থা এখন শোচনীয়।
কৃষকদের কষ্টের ফসলের বড় অংশই চলে যাচ্ছে গভীর নল কূপ অপা রেটরদের পেটে। সরকারের সেচ ভর্তুকি সুবিধা থেকেও বঞ্চি ত হচ্ছে কৃষক।
এক সময়  গভীর নলকূপগুলো ডিজেল চালিত হলেও এখন চলে বৈদ্যুতিক মোটরে।
ফলে কৃষকের সেচ খরচ অনেক কম হওয়ার কথা। কিন্তু কৃষকরা সেই সুবিধা মোটেও পান না।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, সেচ সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিটি গভীর নলকূপে কমিশন ভিত্তিতে একজন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়।
কৃষকরা প্রি-পেইড সেচ কার্ড নিয়ে অপা রেটর দের কাছে গেলে কোনো পানি পান না। ১ ঘণ্টা সেচের জন্য ১২৫ টাকা মূল্যের প্রি-পেইড কার্ড লাগে।
অথচ ১ ঘণ্টার জন্য অপারেটরদের দিতে হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। কোনো কোনো অপারেটরের অধীনে একাধিক নল কূপও থাকে।
এমনকি এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এম ন লোকজনও ঘুসের বিনিময়ে একাধিক নলকূপ অপারে টর হয়েছেন
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায়  গভীর নলকূপ রয়েছে বিএমডিএ’র ৫৩৬টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬টি মোট ৫৫২ টি এবং  অগভীর বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র রয়েছে ৪১১টি।
উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে সেচের আওতায় জমি রয়েছে প্রায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আ ব্দুর রশিদ বলেন, গভীর নলকূপের প্রকারভেদে ঘণ্টাপ্রতি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা সেচ চার্জ ধার্য করা আছে।
কোনো অপারেটর এই নিয়ম লঙ্ঘন করে কৃষকের কাছ থে কে অতিরিক্ত টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোনো অপারেটর অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত অর্থ চাইলে ভুক্ত ভোগীরা যেন অভিযোগ দেন-পরামর্শ দেন তিনি।
এবিষয়ে অপারেটর রুস্তম আলী বলেন, কৃষকেরা চাইলেই সমিতি হবে, তবে প্রদিপ ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন কৃষকেরা তার কাছে গেলে তিনি বিষয়টি দেখবেন।
এবিষয়ে অপারেটর হাবিবুর রহমান বলেন, সমিতি করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নাই, তার ডিপ নিয়ে সমস্যা হয়ে ছিল, প্রদিপ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।#

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *