মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ নওগাঁর রাণীনগরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলোতে বসবাস করছেন ভ’মিহীন ও গৃহহীন মানুষরা।

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই ঘরগু লোতে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।

ঘর নির্মাণের সময় নিম্মমানের উপকরণ ব্যবহার ও মানস ম্মত ভাবে ঘরগুলো নির্মাণ না করার কারণে নির্মাণের প্রায় দুইবছর পরই অধিকাংশ ঘরগুলোর ভিতরে ও বাহিরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

সূত্রে জানা গেছে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক
গৃহিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ধাপের আওতায় উপজে লার একডালা, কালীগ্রাম, বড়গাছা ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ৯০টি, ২য় পর্যায়ে ৩৩টি ও ৩য় পর্যায়ে ৫৩টিসহ মোট ১৭৬টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়েছে।

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি বাড়িতে দুটি কক্ষ, সংযুক্ত রান্নাঘর,
টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দাও রয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়ন
পল্লীতে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ
পানির জন্য টিউবয়েল স্থাপন, চলাচলের জন্য রাস্তা ও নামাযের জন্য মসজিদসহ প্রধান প্রধান প্রয়োজনগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, ২০২২সালে উপজেলার ডাকাহার এলাকায় চৌধুরী পুকুর পাড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৯টি আশ্রয়ণের ঘর।

বর্তমানে এই আশ্রয়ণের অধিকাংশ ঘরে দেখা দিয়েছে ফাট ল। কোন কোন ঘরের দেয়ালে ফাটল এমন ভাবে দেখা দিয়ে ছে যে সেই ঘরে বস বাস করাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ফাটলের কারণে প্রতিটি ঘরের টয়লেটের দরজা লাগানোও সম্ভব হচ্ছে না।

আবার অনেকেই ফাটলগুলো নিজেরাই পূরণ করার চেস্টা করেছে। তবে দ্রুতই যদি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো মেরামত করা না হয় তাহলেআ সন্ন বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরগুলোতেবসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। একই অবস্থা কালিগাঁও (মালিপুকুর) আশ্রয়ণপ্রকল্পের ৩২টি ঘরেরও। চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৮নম্বর ঘরে বসবাসকারী মামুনখন্দকার বলেন আমার কপাল এমনই খারাপ যে মাথা লুকানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার হিসেবে আশ্রয়ণের যে ঘর পেলামতা এখনই ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। দেয়াল ফেটে হা হয়ে থাকার জন্য রাতের বেলা ঘরের দরজা লাগানো সম্ভব হয় না। এছাড়া টয়লেটের দরজাও লাগানো সম্ভব হয় না। কাগজ দিয়ে দেয়ালের ফাটলগুলো লুকিয়ে রেখেছি। সুখের পরিবর্তে বর্তমানে এই ঘর নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। যদি দ্রুত ভালো ভাবে ঘরটি মেরামত করা না হয় তাহলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বউ-সন্তান কে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে।

ডাকাহার আশ্রয়ণ প্রকল্প ০২ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ- সভাপতি হাসান প্রামাণিক বলেন আশ্রয়ণের প্রায় প্রতিটি ঘরের ভিতরে ও বাহিরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এর আগে ফাটল দেখা দিলে অফিসে জানালে কিছু মেরামত করে দিয়েছে কিন্তু এখন ঘরের ফাটলের কথা বললে অফি সের লোকজন আজ নয় কাল কাল নয় পরশু বলে বলে দিন কাটাচ্ছে। আর আমরা বসবাস করছি হতাশা নিয়ে।

কিছু কিছু ঘরের ফাটল এমনই দেখে মনে হবে যে ঘরটি মনে হয় এখনই ভেঙ্গে গায়ের উপর পড়বে।

কালিগাঁও (মালিপুকুর) আশ্রয়ণের বাসিন্দা শাহিনা বেগম বলেন ঘরগুলো মানসম্মত ভাবে নির্মাণ না করার কারণে দুইবছর যেতে না যেতেই ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। জানি না আরো দিন গেলে ঘরগুলোতে কি থাকা সম্ভব হবে কিনা। আমরা গৃহহীনরা প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঠিকই পেলাম কিন্তু জানিনা উপহারের ঘরে আর কতদিন মাথা লুকাতে পারবো।

কালিগাঁও (মালিপুকুর) আশ্রয়ণ ০২ সমবায় সমিতি লিমি টেডের সম্পাদক মোছা: ছাবিনা ইয়াসমিন (মীম) বলেন

ঘরের মধ্যে দেয়াল এমন করে ফেটে গেছে যে কখন যেন শরীরের উপর ভেঙ্গে পড়বে। তাই আমরা আশ্রয়ণের বাসিন্দা রা রাতে ঘর ভেঙ্গে পড়ে জীবন হারানোর ভয় বুকে নিয়ে রাত কাটাচ্ছি। ঘরগুলো মানসম্মত নির্মাণ না করার কারণে দুই বছর না যেতেই এখনই তা বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে।

ফেটে যাওয়া ঘরগুলো পুনরায় ভালো ভাবে মেরামত করার মতো সামর্থ আমাদের নেই।

তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি এই ঘরগুলো দ্রুত দীর্ঘস্থায়ী ভাবে মেরামত করে দেয়া হয় তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে রাতে কিছুটা হলে চিন্তাবিহীন ঘুমাতে পারতাম।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মুঠো ফোনে জানান যে তিনি আশ্রয়ণের ঘরগুলোর ফেটে যাওয়ার
খবর জানেন না। আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পারলাম।

দ্রুত ফেটে যাওয়া ঘরগুলো পরিদর্শনকরে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।

এছাড়া ঘর নির্মাণে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান যে সময় কম থাকার কারণে ঘর নির্মাণে কিছুটা তা ড়াহুড়ো হয়েছে কিন্তু নির্দিষ্ট উপকরণদিয়ে মানসম্মত ভাবেই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

One thought on “ফেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ঘর নিয়ে বিপাকে রাণীনগরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা”
  1. ফেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ঘর নিয়ে বিপাকে রাণীনগরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *