মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ নওগাঁর রাণীনগরের পারইল ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার জাহিদুর রহমান জাহিদের উপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে।

ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কতিপয়
দুর্বৃত্তদের আটক করতে না পারার কারণে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে হামলাকারীদের শনাক্তসহ গ্রেফ তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ।

গত তিনমাসের মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হেলমেট পড়ে
বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তিদের উপর দুবর্ৃৃত্তদের আক্রমণের এই রকম একাধিক ঘটনায় রাণীনগরবাসী বর্তমানে সন্ত্রাসী হেলমেট বাহিনীর আতঙ্কে রয়েছে। চেয়ারম্যান জাহিদ পার ইল গ্রামের তছির উদ্দিন ফকিরের ছেলে। তিনি আদমদীঘি আইপিজে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিষয়ে সহ কারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলাম জা নান, গত রোববার (১২ নভেম্বর) সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় কার্যালয়ে বসে চেয়ারম্যান কাজ করছিলেন।

এসময় প্রথমে প্রায় ৫০বছর বয়সের একজন মাস্ক পরা লোক প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের সাথে কথা আছে বলে আমাকে বের করে দেয়।

এরপরই ৩০-৩৫ বছর বয়সের আরো একজন যুবক হেল মেট ও মাস্ক পরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে কার্যালয় প্রবেশ করেই চেয়ারম্যানকে আঘাত করতে শুরু করে।

এসময় পরিষদ চত্বরে আরো ৩/৪জন হেলমেট ও মাস্ক পরা যুবকরা সেবা প্রত্যাশী ও পরিষদের অন্যান্য কর্মচারীদের ধা রালো অস্ত্র উচিয়ে ধাওয়া করতে থাকে।

এসময় আমাকেও অস্ত্র হাতে ধাওয়া করলে আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। চেয়ারম্যান জাহিদ আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পরিষ দের গেটের বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরাও দ্রুত পালিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, সর্বোচ্চ ২থেকে ৩মিনিটের মধ্যেই ৫-৬ জন দুর্বৃত্তরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে তিনটি মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। ওই হামলায় চেয়ারম্যানের ডান হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর জখম হয়। পরে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে প্রথমে আদমদীঘি উপ জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখান অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রাতে ই তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করে।

ইউনিয়ন পরিষদ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় না থাকায় এবং দুর্বৃ ত্তরা মুখোশ ও হেল মেট পড়ে থাকার জন্য তাদে রকে চেনা সম্ভব হয়নি।

ইউনিয়নের নারী সদস্য মোছা. নাসিমা আক্তার জানান, তিনি
প্রতিদিনের মতো পরিষদে এসে সচিবের কক্ষে অবস্থান কর ছিলেন।

হঠাৎ করেই চিৎকার চেচামেচি শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখেন ৫/৬জন হেলমেট ও মাস্ক পরা দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র হাতে চেয়ারম্যানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করছে। এসময় উপ স্থিত সেবাপ্রত্যাশী ও কর্মচারীরা দিকবিদিক দৌড়ে পালা নোর জন্য চেষ্টা করেন।

এটা দেখে ভয়ে তিনি সচিবের কক্ষে আবারও ঢুকে পরেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন।

ঘটনার সময় একমাত্র তিনি ছাড়া অন্য ১১জন ইউপি সদস্য দের মধ্যে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ (দফাদার) গোলাপ চন্দ্র জানান, ঘটনার সময় তিনি পরিষদের বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যাস্ত ছিলেন।

তবে লোকজনের বিভিন্ন দিক ছোটাছুটি দেখে তিনি পরিষ দের কার্যালয়ের দিকে দৌড়ে আসতেই দুর্বৃত্তরা তাকেও আ ক্রমন করার চেষ্টা করে। উপায় না দেখে তিনি ভয়ে মাটি তে শুয়ে পড়েন। এসময় দূর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে যায়।

পারিবারিক সূত্রে জানা জানা যায় যে মাস্টার জাহিদুর রহমান জাহিদ পারইল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন।

গত ২০২১সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি তার নিজ ওয়ার্ডে একাধিকবার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পারিবারিকভাবে বা অন্য কারো সাথে দ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে জা হিদের পরিবার থেকে বলা হয় বিএনপির রাজনীতি করার কারণে হয়তোবা এমন হামলা হতে পারে।

জাহিদের স্ত্রী মোছা. শ্যামলী আক্তার মুঠোফোনে জানান, জাহিদের কোন শত্রু নেই বললেই চলে। সে সাদা মাটা জীব ন-যাপন করে। কিন্তু কি কারণে কে বা কারা এমন নির্মম কাজটি করলো তা ভাবনার বাহিরে।

দুর্বৃত্তরা জাহিদের পিঠ, কোমর এবং উরুতে প্রায় ৯টি স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরু ত্বর আঘাত করেছে।

এতে ডান হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে জাহিদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। পরিবারে তেমন কোন ব্যক্তি না থাকায় থানায় অভিযোগ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

জাহিদ সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেই সুষ্ঠ বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির জন্য তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পারিবারিক ভাবে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় তেমন কোন জোরালো পদ ক্ষেপও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হামলাকারীদের আটক করার পুলিশি চেস্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *