ডেস্ক নিউজ:এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুরু থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর সেই অভিযোগ আরও বেশি আকারে আসছে।

বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি উঠছে।

নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দুই শতা ধিক প্রার্থীকে ইতোমধ্যে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে, কিন্তু তাতেও যেন তাদের থামানো যাচ্ছে না।

ফলে এবার কমিশন আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা ইসির ডাকে সাড়া দিচ্ছে না বা বারবার আচরণবিধি ল ঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের গঠন করা নির্বা চনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো এখন পর্যন্ত ২১১টি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ৯১ জন। আবার তাদের মধ্যে ৫২ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য।

ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য তলব করা হয়েছে আওয়ামী লীগের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীকেও। এর মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যও রয়েছেন।

শুধু তলব নয়, অভিযুক্ত কারও কারও বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট এলা কার নির্বাচন কর্মকর্তাদের মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাই, চট্ট গ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

এর আগে ইসির নির্দেশনায় করা মামলায় নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন ২০ দিন কারা ভোগের পর বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।

এছাড়া বরগুনা-১ আসনের বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেহের আফ রোজ চুমকির এপিএস মো. মাজেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

অনুসন্ধান কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে ইসির অনু মোদনের পর সংশ্লিষ্ট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ দালতে মামলা করতে নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য এখন মাঠে আছেন প্রায় ৮০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এ ছাড়া ভোটপূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা র জন্য জুডিশিয়াল (বিচারিক) ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে প্রতি টি আসনে একটি করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি রয়েছে।

তারাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। তবে তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটিগুলো ইসিকে সুপারিশ করতে পারে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমি টির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে।

কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দলকে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে বা প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা জানান, প্রার্থীদের আচরণবিধি মানাতে আরও কঠোর হচ্ছে ইসি।

এরই মধ্যে অনেক প্রার্থীকে আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে শো কজ এবং সতর্ক করা হয়েছে। আইন অমান্য করে কেউ পার পাবে না। ক্রমান্বয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচা রের শুরু থেকে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী–সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

গত ৫ দিনে অর্ধশতাধিক স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাও য়া গেছে। বেশির ভাগ জায়গায় হামলা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মীদের ওপর।

এটা নিয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ্ন। সংস্থাটি ভোটের প্রচারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা এবং আচরণবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে।

রাজশাহী ও ঝিনাইদহে দুটি নির্বাচনী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী দের অনুসারীদের মারধরের ঘটনায় দুটি জেলার ডিসি ও পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

শুক্রবার রাতের মধ্যেই প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ব্যবস্থা নিতে শনিবার বৈঠকও ডাকা হয়েছে কমিশনে।

প্রচা রে আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে প্রতিদিন প্রতিবে দন দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *